আর একদিন বাদেই নতুন ইংরেজি বর্ষের শুরু। বর্তমানে নতুন বছরের শুরু আর পুরাতন বছরের শেষটাকে রঙিন করতে গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র সব বয়সী মানুষ মেতে উঠে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে। এ রাতটি শুধু যে আনন্দের তা নয়; বরং এ আনন্দ উদযাপন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে।
তেমনই কিছু ঘটনা এক বছর হয়ে গেলেও এখনো মানুষের মনে গেঁথে আছে। বিশেষ করে থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে আবারও আলোচনায় এসব হৃদয়বিদারক ঘটনা।
একটি হলো আতশবাজির শব্দে ভয় পেয়ে তানজিম উমায়ের নামে এক শিশুর মৃত্যু। অপর দুটি গাজীপুরের কালীগঞ্জে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের জন্য সাউন্ড বক্সে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মিরাজ হোসেন (১৭) নামে এক কিশোরের মৃত্যু। এছাড়া, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে বাসার ছাদে ফানুস ওড়াতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে কিশোর সিয়ামের (১৪) মৃত্যুও দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছিল।
জানা যায়, শিশু উমায়েরের পরিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর (শুক্রবার) রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরদিন শনিবার (১ জানুয়ারি) শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
তার বাবা ইউসুফ রায়হান সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, জন্ম থেকেই হৃদরোগে ভুগতে থাকা উমায়ের মাত্র চার মাস ১৯ দিন বয়সী ছিল। সেদিন (৩১ ডিসেম্বর) রাত ১২টার পর থেকেই টানা বাজির শব্দে কেঁপে উঠছিল শিশু উমায়ের। সেদিন সারারাত সে ছটফট করছিল। পরদিন সকালে উমায়েরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একপর্যায়ে তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে এলে চিকিৎসকরা দ্রুত আইসিইউতে নিয়ে যান। সেখানেই কিছুক্ষণ পর সে মারা যায়।
এছাড়া, বাসার ছাদে ফানুস ওড়াতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে কিশোর সিয়ামের কথাও সবার মনে পড়ার কথা। জানা যায়, নতুন বছর উপলক্ষ্যে বাসার ছাদে ফানুস উড়াতে কেরোসিন ঢালতে গিয়ে সিয়ামের শরীরে আগুন ধরে যায়। পরে আগুন নেভাতে গিয়ে গেলে আরও দুই জন দগ্ধ হন। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিয়ামের মৃত্যু হয়।
সিয়ামের মতোই থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে গিয়ে মৃত্যু হয় মিরাজ হোসেনের। জানা যায়, থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন করতে ওইদিন রাত পৌনে ৮টার দিকে নিজ বাড়ির পাশে সাউন্ড বক্সে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় মিরাজ। পরে তাকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শুধু উমায়ের, সিয়াম বা মিরাজ নয়। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়া পটকা ও আতশবাঁজির শব্দে অনেকেই অসুস্থ বোধ করেন।
আর তাই ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে থার্টি ফার্স্ট নাইটে পটকা ও আতশবাজি ফোটানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আতশবাজির শব্দে ভয় পেয়ে হৃদরোগে শিশু উমায়েরের মৃত্যুর ঘটনাটিও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, থার্টি ফার্স্ট নাইটে দেশব্যাপী আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর অতিরিক্ত শব্দের কারণে শ্রবণশক্তি ও স্মরণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাত, দুশ্চিন্তা, উগ্রতা, উচ্চ রক্তচাপ, মাথা ঘোরা, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়া, মানসিক অস্থিরতা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াসহ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড থেকে থার্টি ফার্স্ট নাইটে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর ৭ বিধি লঙ্ঘন করে অননুমোদিতভাবে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপনের সময় আতশবাজি ও পটকা ফোটালে তা বিধিমালার ১৮ বিধি অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য।
এই আইন ভাঙলে প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক ১ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রদানের বিধান রয়েছে।