বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

খোলাবাজারে ১৯ হাজার পাঠ্যবই জব্দ

ঢাকায় দুই ট্রাক জব্দ, গ্রেপ্তার ২ 
শেরপুরে এক ট্রাক জব্দ, আটক ১ 
সক্রিয় রয়েছে আরও কয়েকটি চক্র: ডিবি 

আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম

নতুন বছরের শুরুর মাস পার হতে চললেও সারা দেশে সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছেনি। এরই মধ্যে খোলাবাজার থেকে প্রায় ১৯ হাজার বই উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার সূত্রাপুরে ১০ হাজার এবং শেরপুরে ৯ হাজার বিনামূল্যের বই উদ্ধার করা হয়। বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সূত্রাপুরের বাংলাবাজার ইস্পাহানি গলির বিভিন্ন গোডাউনে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮ লাখ টাকা। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুজনকে।

গত বুধবার রাতে শেরপুর সদরের লছমনপুর দড়িপাড়া থেকে মাধ্যমিকের এক ট্রাক বই উদ্ধার করেছে পুলিশ। ট্রাকে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির ৯ হাজার বই ছিল। এ ঘটনায় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। বইগুলো শেরপুর জেলার বরাদ্দকৃত নয়। অন্য কোনো জেলার বই হতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রেজুয়ান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ জানায়, ঢাকার সূত্রাপুরের বাংলাবাজার ইস্পাহানি গলির বিভিন্ন গোডাউনে অভিযান চালিয়ে বই জব্দের সময় সিরাজুল ইসলাম উজ্জ্বল (৫৫) ও দেলোয়ার হোসেন (৫৬) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরেও এমন আরও বেশ কয়েকটি চক্রের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে ডিবি।

জানা যায়, নতুন বছরের প্রথম দুদিনে ৪১ কোটি বইয়ের মধ্যে ১০ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি। বাকি বই ৩০ জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার আশা প্রকাশ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সব বই না পাওয়া পর্যন্ত এনসিটিবির ওয়েবসাইটে আপলোড করা বইয়ের পিডিএফ কপি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ‘বই সংকটের’ মধ্যেই জানুয়ারির শেষভাগে এসে খোলাবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ বই জব্দের তথ্য দিল ডিবি।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি চক্র বাংলাবাজারের ইস্পাহানি গলিতে বিভিন্ন গোডাউনে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি পাঠ্যবই বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে মজুদ করেছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুই ট্রাক বই জব্দ করা হয়। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ১০ হাজার বই রয়েছে। জব্দ করা এসব বইয়ের বিষয়ে আদালতকে অবগত করা হবে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এনসিটিবিকে হস্তান্তর করা হবে।’

সাংবাদিকেদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বইগুলো পরিবহনের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, একটা চক্র বইগুলো নিয়ে যায়। এরপর অতিরিক্ত বইগুলো এনে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয় বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি।’

অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ রয়েছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১১৬টি প্রেসে বই ছাপানো হয়। ঢাকার বাংলাবাজার এবং ঢাকার বাইরেও কয়েকটি প্রেসে ছাপানো হয়। যারা সরকারি কার্যাদেশ পেয়ে থাকে। অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ আছে কি না বিষয়টা তদন্তাধীন। যদি অনুসন্ধানে পাই অতিরিক্ত বই ছাপানো হয়েছে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এনসিটিবি অথবা মাউশির কেউ জড়িত কি না— জানতে চাইলে নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘এনসিটিবির দুটি গোডাউন রয়েছে; একটা তেজগাঁও ও আরেকটা টঙ্গীতে। সেখানেই বইগুলো সংরক্ষণ করা হয়, এর বাইরে কোথাও সংরক্ষণের সুযোগ নেই। ভেতরের কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেরপুরে এক ট্রাক সরকারি বই উদ্ধার

এদিকে শেরপুর সদরের লছমনপুর দড়িপাড়া থেকে মাধ্যমিকের এক ট্রাক সরকারি বই উদ্ধার করেছে পুলিশ। বইগুলো বুধবার রাত ৯টার দিকে শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর দড়িপাড়া থেকে উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর থানা পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, এক ট্রাক বিনামূল্যে বিতরণের মাধ্যমিকের অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির বই নিয়ে ট্রাকটি শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর দড়িপাড়া আসে। খবর পেয়ে পুলিশ বইসহ ট্রাকটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মইদুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করা হয়। পরে গণনা করে ওই ট্রাকে ৯ হাজার বই পাওয়া যায়। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে বইগুলো কুড়িগ্রাম জেলার বরাদ্দকৃত বই। শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুবায়দুল আলম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত