বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

পুলিশ ‘জনবান্ধব’ হবে?

আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৫ এএম

বাংলা ভাষায় প্রবাদ আছে ‘বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা’। এই তল্লাটে পুলিশ ব্যাপারটার উৎপত্তি ঔপনিবেশিক আমলে এবং সেই সময়েই সম্ভবত প্রবাদটার জন্ম। ব্রিটিশ আমলে এই দেশীয়রাই পুলিশ হিসেবে যোগ দিয়ে ব্রিটিশবিরোধী ও সাধারণ জনগণকে নির্মম অত্যাচার করে ঔপনিবেশিক শাসকদের স্বার্থ ও ক্ষমতা নিশ্চিত করতেন। পুলিশের এই নির্মমতার কারণেই প্রবাদটির জন্ম। ইংরেজ চলে যাওয়ার প্রায় আট দশক পার হলেও পুলিশ নিয়ে এ দেশের মানুষের ধারণা তেমন একটা পাল্টায়নি। কাগজে-কলমে পুলিশ জনগণের বন্ধু হলেও, পুলিশকে এ দেশের মানুষ বাঘের চেয়েও বেশি ভয় পায়। জনমনে ধারণা আছে যে, পুলিশ মানেই হেনস্তা। পুলিশ মানেই ঘুষ, পুলিশ মানেই নানারকম পীড়নের সম্ভাবনা। আর এই ভয়, অশ্রদ্ধা চূড়ান্ত মাত্রার ঘৃণায় রূপ নেয় গত বছরের জুলাই আন্দোলনে।

বাংলাদেশের দীর্ঘতম সময়ের স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পুরোটা সময় পুলিশ বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং যেকোনো রকমের বিরোধিতাকে নির্মমভাবে দমন-পীড়ার করার কাজে লিপ্ত ছিল। আর জুলাইয়ে যখন হাসিনাবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে, তখন নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে, জনগণের টাকাতেই কেনা অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, প্রচন্ড জিঘাংসায় নিরস্ত্র, অসহায় মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা। কিছু স্থানে এর প্রতিক্রিয়ায় জনতাও পুলিশকে আক্রমণ করে। আর সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর, ক্রোধান্বিত জনতা দেশের প্রায় প্রতিটি থানা জ্বালিয়ে দেয়, লুট করে অস্ত্রাগার। পুলিশের প্রতি জনতার আস্থা শূন্যতে নেমে আসা, এক সময় পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে দেশ। তবে সে সময় অভ্যুত্থানের চেতনায় উদ্বুদ্ধ থাকা মানুষ সেই শূন্যতা তেমন একটা বুঝতে দেয়নি। অবিশ্বাস্য উদাহরণ তৈরি করে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন অবনতি হতে দেয়নি আগস্ট মাসের মধ্যবর্তী সময় থেকে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু সেটা একটা ব্যতিক্রমী সময়, একটা দেশের আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে অতি অবশ্যই প্রশিক্ষিত এবং সদা দায়িত্বরত বাহিনী লাগবেই। রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের যে চুক্তি তার প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়া। এর বদলে ‘রাষ্ট্র’ নাগরিকের ওপর ‘কর আরোপ’ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘শক্তি প্রয়োগ’র অনুমতি দেয়।

কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে যে, পুলিশের রূপ একেক দেশে একেক রকম হয়। ঔপনিবেশিক প্রভুরা নিজের দেশে পুলিশকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুললেও উপনিবেশগুলোতে তা গড়ে তুলেছেন নিপীড়কের আদলে। গবেষক সামজীর আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশের পুলিশি সংস্কৃতির প্রবণতা ব্যাপকভাবে উপনিবেশের অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রভাবিত। এটা যেমন পুলিশিং ধারণাটির দর্শনগত দিক থেকে তেমনই কাঠামোগত দিক থেকেও সত্য। ভারতে আধুনিক পুলিশ সৃষ্টির সময় ব্রিটিশ শাসকদের হাতে তখন পর্যন্ত আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থার দুটি মডেল উপস্থিত ছিল। একটি মডেল হলো লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের, অন্যটি আয়ারল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত রয়্যাল আইরিশ কনসটাবুলারির (আরআইসি) মডেল। প্রথমটি নিজ দেশের জনগণের জন্য সেবাধর্মী চরিত্রের, দ্বিতীয়টি অপর জনগণের জন্য বল প্রয়োগধর্মী মডেল। ভারতে প্রতিষ্ঠিত মডেলটি কাঠামো এবং দর্শনগত দিক থেকে আরআইসির অনুসারী। ভারতীয় পুলিশ এবং আরআইসি দুই মডেলই অপর জনগণকে জোর করে বশীভূত রাখার জন্য তৈরি। আরআইসি ছিল কেন্দ্রীয় পুলিশি ব্যবস্থা। অন্যদিকে লন্ডন পুলিশ ছিল বিকেন্দ্রিক। পার্থক্যটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা তখনই তৈরি হয় যখন পুলিশের একটা একক প্রধান উদ্দেশ্য থাকে। ভারত বা আয়ারল্যান্ডে তা ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের স্বার্থরক্ষা। যে কারণে ‘ল অ্যান্ড অর্ডার’ ছিল এই দুই ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচনার বিষয়। অন্যদিকে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ ছিল অনেকটা নিরাপত্তা সেবাধর্মী। জনগণের প্রয়োজন সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে। ফলে আঞ্চলিক প্রয়োজন গুরুত্ব পেয়েছে এবং ব্যবস্থাটি পরিচালিত হয়েছে স্থানীয় সরকারের অধীনে। এটা সম্ভব হয়েছে, কারণ সেখানে কোনো কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালন মুখ্য ছিল না।

কাঠামোগত দিক থেকেও ভারতীয় পুলিশ আরআইসির অনুসারী। সফল কাঠামো আসলে উদ্দেশ্যকেই অনুসরণ করে। আয়ারল্যান্ড ও ভারতে পুলিশি কাঠামোর একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো ব্যারাকভিত্তিক আবাসন ব্যবস্থা। মূলত সেনাবাহিনী এই ব্যবস্থার জন্মদাতা। জনগণের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা এবং কঠিন গোষ্ঠীভিত্তিক ভ্রাতৃত্ববোধ এই ব্যবস্থার দৃশ্যমান উদ্দেশ্য। জনগণের সঙ্গে মেশা মানে জনগণের অংশ হয়ে পড়া। আর জনগণ ও শাসক যদি আলাদা হয় তবে সেক্ষেত্রে পুলিশের ওপর শাসকের নিয়ন্ত্রণ তো কমবেই, উপরন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা বৈরিতারও হতে পারে। জনগণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব স্বাধীন বাংলাদেশে কমানো যায়নি। উল্টো, র‌্যাবের মতো বাহিনী করে রীতিমতো জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। শুরুর দিকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দমন করার কথা বলে জনপ্রিয়তা পেলেও পরের দিকে র‌্যাব রীতিমতো খুনি বাহিনীতে পরিণত হয় বলে অভিযোগ আছে। আরেকটা বড় আতঙ্ক হচ্ছে, সাদা পোশাকের পুলিশ। আইনে অনুমোদন না থাকলে, সাদা পোশাকের পুলিশরা অসংখ্যা মানুষকে তুলে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। তাদের কাউকে কাউকে যথাসময়ে আদালতেও হাজির করা হয় না। আবার এই সুযোগে, অপরাধীরাও অনেক মানুষকে তুলে নিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়। গুমের মতো অমানবিক অপরাধ গোটা আওয়ামী স্বৈরশাসনের প্রতীক হয়ে রয়েছে। জনগণের আশা ছিল, হাসিনার পতনের পর পুলিশ বাহিনীর ব্যাপক সংস্কার হবে। অবশেষে জনবান্ধব হবে জনগণের টাকায় ও জনগণের জন্য গঠিত বাহিনীটি। নভেম্বরের শেষ দিকে এক আলোচনায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘পুলিশের সবকিছু ভেঙে পড়েছে। পুলিশে মিলিটারাইজেশনের (সামরিকীকরণ) ফলে কী ক্ষতি হয়েছে সেটা সবাই দেখছেন। এখন পুলিশে মিলিটারি ব্রেন ঢুকে পড়েছে। এ জন্য পুলিশে সংস্কার জরুরি। পলিটিক্যাল ভিশন (রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা) না থাকলে কোনো সংস্কারই কার্যকর হবে না। তা ছাড়া জনগণকে সম্পৃক্ত করে পুলিশিং করলে বড় সংখ্যক পুলিশের প্রয়োজন হবে না।’ অন্য অনেক সংস্কারের মতো পুলিশের সংস্কারের জন্যও কমিটি করা হয়। আলোচনা সভায় পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য গোলাম রসুল বলেন, ‘আমরা গত ২ মাস ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছি। কেমন পুলিশ হবে সে বিষয়ে জনগণের মতামতকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা মিডিয়া এবং বিভিন্ন মাধ্যমে জরিপ চালাচ্ছি। সেখানে জনসাধারণের মন্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমরা যে জিনিসটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, সেটা হচ্ছে জাতীয় জননিরাপত্তা কমিশন গঠন করা। এটি একটি স্থায়ী কমিশন হবে, এটির একটি সচিবালয় থাকবে এবং এটির একটি গবেষণাগার থাকবে। রাজনৈতিক ব্যক্তি, সিভিল সোসাইটি নিয়ে সম্মিলিতভাবে এটি গঠন করা হবে। এ জন্য বিদ্যমান আইন এবং যেসব অসংগতি রয়েছে সেগুলো রিভিউ (পর্যালোচনা) করে এবং সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে।’ পুলিশের সাবেক ডিআইজি মেজবাউন্নবী বলেন, ‘এই ছাত্র আন্দোলনের পর আমার মনে হয় ভালো পুলিশ পাওয়ার এটাই শেষ সুযোগ, বারবার এমন সুযোগ আসবে না। র‌্যাব যখন শুরু হয়েছে, তখন থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে। মনে চাইল আরেকটা বাহিনী বানিয়ে ফেললাম, সেটা হবে না। যার ৬ দিনের ট্রেনিংও নেই, সেও এই বাহিনীতে পুলিশিং করছে। এই জিনিসটা পুরোটাই রাজনীতিকেন্দ্রিক হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে পুলিশ একটা ব্যাড কালচারে ঢুকেছে। ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের ভেতর পুলিশ কাজ করে। জুডিশিয়ারি আছে, সেসব জায়গায়ও সংস্কার করতে হবে।’

ফেব্রুয়ারি মাসে এসেও দেখা যাচ্ছে যে, পুলিশের সেই অর্থে সংস্কার হয়নি। পুলিশের মনোভাব বা জনগণের সঙ্গে দূরত্বও পরিবর্তিত হয়নি। দেশ রূপান্তরের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও সাদা পোশাকে (ইউনিফর্ম ছাড়া) পুলিশের তৎপরতা কমছে না। শীর্ষ পর্যায় থেকে নিষেধ থাকার পরও সাদা পোশাকে চলছে পুলিশের অভিযান। আসামি ধরার নামে পুলিশের কিছু সদস্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই অভিযান চালাচ্ছে। বিনা ওয়ারেন্টে (গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই) বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হানা দিচ্ছে পুলিশ। সাদা পোশাকে অভিযানে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও থানা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা কৌশলে অহরহ এমন অভিযানে নামছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। গত সপ্তাহে, কুমিল্লায় যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সাদা পোশাকে কয়েকজন থাকার বিষয়ে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। এ ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন তৈরির পর পুলিশও বিষয়টি আমলে নিয়েছে। এ ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির বিতর্কিত ও সমালোচিত ৫৪ ধারায় বিনা ওয়ারেন্টে আটকের ঘটনাও ঘটছে। এর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছর ধরে পুলিশের বিরুদ্ধে সাদা পোশাকে ও ৫৪ ধারায় আটকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ থাকলেও কোনো প্রতিকার হয়নি। উচ্চতর আদালতের নির্দেশনা ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে একইভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও সাদা পোশাকে পুলিশি অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির ক্ষেত্রে ব্যক্তির মর্যাদা এবং সম্মানরক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে হয়রানি, শারীরিক ও মানসিকভাবে নিগ্রহের ঘটনাও আছে।

সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সাদা পোশাকে আটকের সময় আটককারীরা পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাইক্রোবাস রিকুইজিশন করে ব্যবহার করা হয় গ্রেপ্তারের কাজে। এ কারণে কারা আটক করল বা আটক করে কোথায় নেওয়া হলো, তা জানা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে। আটকের কথা পরে জানা গেলেও দেখা যায় আইন লঙ্ঘন করে তাদের হেফাজতে রাখা হয়। গত সরকারের আমলে যাদের বিভিন্ন সময়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল বা গুম করা হয়েছে তাদের অধিকাংশকেই সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়েছিল। তুলে নেওয়ার সময় ডিবি, র‌্যাব, সিআইডি বা সামরিক গোয়েন্দাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো পরিচয় দেয়নি। ফলে কারা নিয়েছে, কেন নিয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে তখন জানা সম্ভব হয়নি। অনেকেরটা পরেও জানা যায়নি। এ ধরনের অভিযানকারীরা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ব্যবহার করত, যাতে তাদের চিহ্নিত করা না যায়। গুম কমিশনে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে এ ধরনের গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে ১ হাজার ৬৭৬টি। তার মধ্যে ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করেছে কমিশন। যার মধ্যে ৭৩ শতাংশ ভুক্তভোগী ফিরে এসেছেন। বাকি ২৭ শতাংশ এখনো নিখোঁজ।

মানবাধিকারকর্মীরা জানান, ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল এক রায়ে হাইকোর্ট ৫৪ ধারার প্রয়োগে কারও সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা না করা, আটক বা গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পরিচয় দেওয়া, কাউকে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ না দেওয়া, রিমান্ডে নির্যাতন না করা এবং ধারা দুটি সংশোধনের তাগিদসহ ১৫টি নির্দেশনা দেয়। ২০১৬ সালের ২৪ মে আপিল বিভাগেও এ রায় বহাল থাকে। ওই বছরের ১০ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ সংক্রান্ত নীতিমালা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য নিয়ে বলা হয়, নাগরিকের সম্মান রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উঁচুমানের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ ছাড়া সংবিধানে স্বীকৃত নাগরিকের অধিকারের সুরক্ষার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এ নির্দেশনা কার্যকর হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন থানার সাদা পোশাকের টিমের বিরুদ্ধে নানা অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আইজিপি কমপ্লেইন সেলে প্রতিদিনই এ ধরনের অভিযোগ জমা পড়ছে। আবার সাদা পোশাকে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার শিকারও হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। অথচ উচ্চ আদালত ও ডিএমপির পক্ষ থেকে ২০১৪ সাল থেকে সাদা পোশাকে অভিযান চালানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করা ছাড়া আর কোনো পরিবর্তনের উদ্যাগও নেওয়া হচ্ছে না। জুলাইয়ের অভিজ্ঞতা পুলিশের জন্যও গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা দরকার। জনগণের সঙ্গে ভীতি নয়, বরং কীভাবে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, এ বিষয়ে পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন জরুরি। স্বাধীন দেশের পুলিশ উপনিবেশের মতো শাসকের অত্যাচারের লাঠি না হয়ে ‘জনবান্ধব’ হওয়া ছাড়া সমাজে শৃঙ্খলা ফিরবে না।

লেখক: সাংবাদিক ও অনুবাদক

[email protected]

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত