শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

অস্ত্রভয়ে ছিনতাই কমবে?

আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২২ এএম

কেউ কেউ বলেন, ঘর থেকে বের হলেই রাস্তাঘাটে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা। কখন যেন কী হয়? যদিও যতটা বলা হচ্ছে, বাস্তবতা ঠিক ততটা নয়। কিন্তু মানুষ যে সড়কপথে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটা সত্য, জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে যারা রয়েছেন, সেই পুলিশ সার্জেন্টও অনেক ক্ষেত্রে অসহায় হয়ে যান। দেখা যায়, ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের কাছে রয়েছে আধুনিক অস্ত্র। ফলে অপরাধীদের ধরতে তারা ব্যর্থ হন। আবার অল্প কিছু সংখ্যক পুলিশের বিরুদ্ধে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, সড়ক-মহাসড়কে ছিনতাই ঠেকাতে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক সার্জেন্টদের হালকা বা ছোট অস্ত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জানাচ্ছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। গত বৃহস্পতিবার উত্তরার আজমপুর বিডিআর মার্কেটসংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীতে কাউন্টার ও ই-টিকেটিং’ পদ্ধতিতে বাস চলাচলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে ছিনতাই বা অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের বিষয়টি আমি অবগত আছি। তবে পুলিশের জনবল কম থাকায় সব দিকে নজর দেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা আরও অসহায়। যারা ডিউটি করেন, তারা রয়েছেন নাজুক অবস্থায়। এজন্য ট্রাফিক সার্জেন্টদের স্মল আর্মস দিচ্ছি। স্মল আর্মস দিয়ে তিনি যেন একাই দু-তিনজন ছিনতাইকারীকে মোকাবিলা করতে পারেন।’

দেশের অন্য জেলা-উপজেলার কথা বাদ। খোদ রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় প্রতিদিন ভোর থেকেই শুরু হয় ছিনতাই। আর রাত হলে তো কথাই নেই। এ ছাড়া দিনে-রাতে বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যাল বা জ্যামে গাড়ি দাঁড়ানো থাকলে, ফোন টানা পার্টি তো রয়েছেই। সবই হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের সামনে। কিন্তু আতঙ্কে থাকেন যাত্রী-পথচারীরা। প্রায় দিনই সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ছিনতাইকারীর হাতে প্রাণ গেছে নারী, শিশু ও পুরুষের। অথবা কেউ হয়েছেন গুরুতর আহত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করছেন না, তা নয়। কিন্তু ছিনতাই বন্ধ হচ্ছে না। যে কারণে ট্রাফিক সার্জেন্টদের হালকা অস্ত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এর ফলে কি ছিনতাই কমবে? আর অস্ত্র হাতে পাওয়ার পর সেই অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে যদি কমিটমেন্ট না থাকে, তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ছিনতাই ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর, অসংখ্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসার একাধিকবার গণমাধ্যমকে বলেছেন। কিন্তু তার পরও নির্মূল তো দূরের কথা, নিয়ন্ত্রণেই আসেনি। এর প্রমাণ হচ্ছে, সার্জেন্টদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া। 

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে সংঘবদ্ধ বেশ কয়েকটি ছিনতাইকারী গ্রুপ রয়েছে। এরা মূলত ঢাকার উপকণ্ঠ সাভার, গাজীপুর, টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে ভোরে বা সন্ধ্যায় শহরে এসে ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। এ ছাড়া সংঘবদ্ধ ছিনতাই চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ব্যাংকগুলোতে রেকি করে। কারা পরিমাণে বেশি অর্থ উত্তোলন করে, কোথায় যাবে সেসব তথ্য সংগ্রহ করে ছিনতাই করে। আবার হাইওয়েতে প্রথমে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ডাকাতি করে তারা। পরে ডাকাতি করা গাড়ি নিয়ে পুলিশ পরিচয় দিয়ে টহল দিতে থাকে। এরপর তল্লাশির নামে পণ্যবাহী ট্রাক থামিয়ে করা হয় ডাকাতি। এ রকম ঘটনাও আমরা জানি। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, যারা চুরি এবং ছিনতাইয়ের মতো কাজ করে তাদের কাছে এটা নেশা এবং পেশা। কারণ তাদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। ফলে কোনটা অপরাধ আর কোনটা অপরাধ নয়, সেটা অনেক ক্ষেত্রে তারা পার্থক্য করতে পারেন না। আবার তাদের ওপরে প্রভাবশালী একটা মহল থাকে। এমনটা অনেক দিন থেকেই ধারণা করেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।  এ ধরনের অপরাধ কমিয়ে জনজীবনে স্বস্তি আনতে হলে, শুধু পুলিশ সার্জেন্টের হাতে অস্ত্র থাকলেই ছিনতাই কমবে না। অস্ত্র হাতে পাওয়ার পর, এ বিষয়ে কমিটেড থাকতে হবে। নিজেকে নিরাপদ রেখে, শুধু যেন এ ধরনের অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়। পরবর্তী সময়ে এটি নিয়ে খোদ পুলিশের বিরুদ্ধেই যেন অভিযোগ না ওঠে। আর এই ধরনের অস্ত্রভয়ে ছিনতাইকারীরা কি নিবৃত্ত হবে!

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত