সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

অখ্যাত 'দৌড়' যুক্ত হলো ফুটবলের সঙ্গে

'দৌড় শিগগিরই ফুটবল ভক্তদের জন্য জাতীয় দলের জার্সি বিক্রি করবে

আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম

ফেসবুকে প্রতিষ্ঠানটির পেইজে ঢুকে দেখা গেলো স্রেফ ১৬ হাজার ফলোয়ার। অনলাইনে স্পোর্টস সরঞ্জামাদী বিক্রি করে দৌড় নামের এই প্রতিষ্ঠান। দেশের স্থানীয় পোশাক ব্র্যান্ডের জগতে মোটেই পরিচিত নয় এই ব্র্যান্ড। অথচ তাদের সঙ্গে সকল জাতীয় দলের কিট পার্টনার হিসেবে দুই বছরের চুক্তির ব্যাপারটিকে 'যুগান্তকারী পদক্ষেপ' হিসেবে দাবী করছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা! বিষয়টিকে এমনভাবে বাফুফে কর্তারা তুলে ধরছেন, মনে হচ্ছে দৌড়ের সঙ্গে চুক্তি করে বিশাল লাভবান হয়েছে বাফুফে। নির্জলা সত্য হলো ফুটবলকে পুঁজি করে অখ্যাত এই ব্র্যান্ড রাতারাতি পরিচিত পাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবে। 

বিষয়টি একটু গভীরে গিয়ে ভাবলেই পরিস্কার হবে। দেশের ফুটবল সাফল্য না পেলেও এর অনুসরণকারীর সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কারণেই বেশ আলোচিত দেশের ফুটবল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ তারকা হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশ দলে খেলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আগ্রহের মাত্রা বেড়ে গেছে ভীষণভাবে। এ মাসের শেষের দিকেই হয়তো হামজা ঢাকা আসবেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দিতে। তাতে স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় দল নিয়ে আগ্রহ বাড়বে। হামজা যখন দেশের জার্সি পড়ে খেলবেন কিংবা অনুশীলন করবেন, তখন লাখ-লাখ চোখ অনুসরণ করবে তাকে ও বাংলাদেশ দলকে। হামজার বুকের ডান পাশেই থাকবে এই দৌড়ের লোগো। অর্থাৎ এক হামজার মাধ্যমেই পরিচিতি পেয়ে যাবে দৌড়। 

তার বিনিময়ে সারা বছর পুরুষ ও নারী জাতীয় দল এবং সবক'টি বয়সভিত্তিক দলকে বিনামূল্যে কিটস সরবরাহ করবে দৌড়। দৌড়ের সামনে বহির্বিশ্বের দরজা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থাও করছে বাফুফে। ফিফা স্বীকৃত ম্যাচে কিট স্পন্সরের লোগো ব্যবহার করতে হলে তাদের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। অনুমোদনের জন্য ফিফার কাছে পাঠানো হবে দৌড়ের লোগো। সেই অনুমোদন মিলে গেলে দৌড় ফিফার স্বীকৃতির বিষয়টি বিপণন করে নিজেদের ব্যবসার প্রসার ঘটানোর সুযোগ পাবে। হামজা, জামাল, তপু বর্মণদের দিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে ব্যবহার করতে পারবে তারা। 

মঙ্গলবার বাফুফে ভবনে বাফুফে ও দৌড়ের সঙ্গে হয়েছে দুই বছরের চুক্তি। যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়ালও। একটি দেশীয় ব্র্যান্ডকে প্রমোট করার মধ্যেই কৃতিত্ব খুঁজে নিচ্ছেন বাফুফে বস, 'সরঞ্জামের মান কেমন হবে, সেটা যাচাই করেই আমরা একটি স্থানীয় ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করেছি। স্যাম্পল হিসেবে তাদের জার্সি পরে স্বনামধন্য কিছু ক্লাব অনুশীলন করেছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাম বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দিতে চাই। আগে আমাদের বিদেশ থেকে কিটস কিনতে হতো। কিন্তু এখন হবে উল্টো। আমরা এই ব্র্যান্ডকে বিদেশে নিয়ে যাবো। অন্যদের প্রয়োজনে স্পন্সর করবে।'

বাফুফের সহ-সভাপতি ও মার্কেটিং কমিটির প্রধান ফাহাদ করিম জানান, গত বছর বিভিন্ন জাতীয় দলের জন্য প্রায় কোটি টাকার ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয় কিনতে হয়েছে। চলতি বছর খেলার সংখ্যা বাড়ছে বলে এ খাতে খরচও বাড়বে। দৌড়ের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এই খাতে ব্যায় করতে হবে না বাফুফেকে। এটাকে বড় লাভ হিসেবে দেখানোর চেষ্টাই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে করে গেছেন এই কর্মকর্তা। অথচ কিট পার্টনারশিপ স্বত্ত্ব বিক্রি করে যে এর চেয়ে ঢের বেশি অর্থ বাফুফে পেতে পারতো, এ দিকটায় নজর নেই তার। হামজার মতো তারকার পরিচিতি কাজে লাগিয়ে দৌড় তাদের সারা বছরের খরচার কয়েকগুণ বেশি প্রচার তুলে নেবে, এটাকেই বড় করে দেখছেন না বাফুফের কর্তারা। 

ফাহাদ করিম বলেন, 'আমাদের চাহিদা মতো দৌড় মেন্স ও ওমেন্স দলগুলোকে কিট সরবোরাহ করবে বছরব্যাপী। আমরা দুই বছরের চুক্তি করলেও এক বছর পর রিভিউ করবো। তাছাড়া বানিজ্যিকভাবে এই কিট বিক্রির একটা অংশ বাফুফেও পাবে। এছাড়া এই লোগোকে ফিফার অনুমোদন নেওয়ার জন্য পাঠানো হবে। যদি ফিফা অনুমোদন করে তবে দৌড় ভবিষ্যতে বহির্বিশ্বেও পণ্য বিক্রি করতে পারবে কিংবা অন্যতম সদস্য দেশগুলোর স্পন্সর হতে পারবে।'

এদিকে দৌড়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদ আলম চৌধুরী বলেন, 'পণ্যের মানের ক্ষেত্রে আমরা আপোষহীন। এছাড়া জার্সির ডিজাইন নিয়ে বাংলাদেশ বংশদ্ভুত একজন প্রবাসী ডিজাইনার কাজ করছেন। জার্সিতে বাংলাদেশের ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে।'

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত