সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চাল আমদানি অব্যাহত রেখেছে সরকার। পাকিস্তান, ভারত, ভিয়েতনামের পর এবার সিঙ্গাপুর থেকে নন বাসমতী সিদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ২৬৫ কোটি ২০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের অ্যাগ্রো কর্প ইন্টারন্যাশনাল পিটিই, এলটিডি থেকে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
উপদেষ্টা পরিষদ প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে। এই চালের প্রতি টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৩৪ দশমিক ৭৭ মার্কিট ডলার। আর মোট ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে ২৬৫ কোটি ২০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ চাল কেনা হবে।
এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন আতপ চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ৫৭৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর প্রতি টনের মূল্য ধরা হয় ৪৭৪ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার।
তার আগে ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়।
পাকিস্তান থেকে ‘জিটুজি’ পর্যায়ে ৫০ হাজার টন আতপ চাল কিনতে ব্যয় ধরা হয় ৩০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আর প্রতি টনের মূল্য ধরা হয় ৪৯৯ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির ব্যয় ধরা হয় ২৭৭ কোটি ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি টন চালের মূল্য ধরা হয় ৪৫৪ দশমিক ১৪ মার্কিন ডলার।
তার আগে গত বছরের ৪ ও ১৮ ডিসেম্বর ভারত থেকে ৫০ হাজার টন করে নন-বসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। ৪ ডিসেম্বর আমদানির অনুমোদন দেওয়া চালের মূল্য ধরা হয় ২৮০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর ১৮ ডিসেম্বর আমদানির অনুমোদন দেওয়া চালের মূল্য ধরা হয় ২৭৪ কোটি ২০ হাজার টাকা।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আসন্ন রমজান মাসে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে বিশেষ ট্রাক সেল কার্যক্রম চালাবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এই কার্যক্রমের আওতায় ভর্তুকি মূল্য চাল, ডাল এবং ভোজ্যতেল বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ভোজ্যতেল, চাল এবং তেল এই তিনটি পণ্য ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতেও ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। বিশেষ ট্রাক সেল হবে, রোজার মাস পুরোটাই। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেও এই কার্যক্রম চলবে।
এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখে আটটি বিভাগীয় শহরে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা সরকারি কাজে দেশের বাইরে থাকায় পরিকল্পনা উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সারা দেশের স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী পরিবারগুলোর মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে নিয়মিত পণ্য বিক্রি অব্যাহত রেখেছে টিসিবি। এ ছাড়া গত সোমবার থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী কার্যক্রম ছাড়াও খোলা ট্রাকে ভর্তুকি মূল্যে বোতলজাত সয়াবিন তেলসহ পাঁচটি পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি।
এর আওতায় একজন ক্রেতা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রাক থেকে সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি করে মসুর ডাল ও ছোলা, এক কেজি চিনি এবং ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারছেন। এক্ষেত্রে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম রাখা হচ্ছে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি চিনি ৭০ টাকা, মসুর ডাল ও ছোলা ৬০ টাকা এবং খেজুর ও চিনি ১৫৬ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে।