শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

জুলাইয়ের ঘটনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৬ এএম

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সংঘটিত ঘটনা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ‘সত্য’ উদঘাটিত হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলো নেতারা। একই সঙ্গে এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন, তার আন্তর্জাতিক ‘স্বীকৃতি’ পাওয়া গেছে বলেও মন্তব্য তাদের। গত বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যান সাক্ষাৎ শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে উদঘাটন হওয়ায় ধন্যবাদ জানাই। আমরা স্বস্তি প্রকাশ করছি। সমস্যাটা হচ্ছে, যখন জাতিসংঘ বলে, তখন আমরা ঘটনাগুলো বিশ্বাস করি। আর যখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলো বলি, অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না। যাহোক, আজ আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, জাতিসংঘের যে পর্যবেক্ষণ কমিটি এসেছে, তাদের যে রিপোর্ট, তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা সঠিকভাবেই বলেছে যে, একজন ব্যক্তি বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশেই সব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।’ ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে ফেরত দেবে এবং তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও আশা করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশেই যত মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে এবং গণতন্ত্রকে, প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেওয়া, আজ সেটাই ফুটে উঠেছে। সুতরাং এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে হাসিনা একজন ফ্যাসিস্ট এবং তিনি এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছেন,নির্যাতন করেছেন ও গণহত্যা করেছেন।’

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান লেখেন, ‘জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বাংলাদেশে ’২৪-এর গণহত্যার রিপোর্ট আজ (গত বুধবার) প্রকাশ করেছে। খুনি এবং খুনিদের মাস্টারমাইন্ডদের তথ্য ও পরিচয় জাতিসংঘ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছে। এ রিপোর্টকে আমরা অভিনন্দন জানাই।’ তিনি আরও লেখেন, ‘মজলুমের পক্ষে নয় বরঞ্চ মজলুম বিষয়ে জাতিসংঘের এই রিপোর্ট গণহত্যার দলিল হয়ে থাকবে। সময়ের দাবি, গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম রব গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিশ্বমানবতার সম্মুখে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ও প্রমাণিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার রাজনীতি সমাপ্ত হয়ে গেছে। দেশের জনগণকে নির্বিচারে নৃশংস হত্যার নির্দেশদাতা ও অনুমোদনকারীর, বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাই হবে রাষ্ট্রের সময়োচিত পদক্ষেপ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সমগ্র জাতির গতিমুখ পরিবর্তন হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে, ২৪-এর গণহত্যার অপরাধে অপরাধী হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিও অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট জুড়ে দেশে যা হয়েছে তা নজিরবিহীন। গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে এত হত্যা, এত খুন-গুম, জেল-জুলুম, দমনপীড়ন-নির্যাতন পৃথিবীর খুব কম দেশের ইতিহাসে পাওয়া যাবে। এ অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার হতেই হবে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর জুলাই-আগস্টেই সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর দায়দায়িত্ব এককভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে। এ অবস্থায় শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে যেকোনো মূল্যে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ভারত জাতিসংঘেরও সদস্য। তাই তাদের উচিত জাতিসংঘের এ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে শেখ হাসিনাকে দ্রুত ফেরত পাঠানো।’

গতকাল বিজয় নগরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘জাতিসংঘ ঘোষিত গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে আপনাদের (ভারত) দেশ থেকে বহিষ্কার করুন, না হয় নিজেদের গণতন্ত্রী ও মানবাধিকার রক্ষাকারী হিসেবে পরিচয় দেবেন না। ৫ আগস্ট সরকারের পতন না হলে আন্দোলনকারীদের অনেকেই পরে গুম-খুনের শিকার হতেন।’

গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি গণহত্যাকারী ও মানবাধিকারবিরোধী দল হিসেবে দেশ এবং আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত হয়েছে। গণ অধিকার পরিষদ গণহত্যার বিচারে সোচ্চার।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের নির্বাহী বৈঠকে নেতারা বলেছেন, ‘অভ্যুত্থানের ছয় মাস পার হলেও অবশেষে আয়নাঘরে নির্যাতনের কিছু বীভৎস-লোমহর্ষক চিত্র জাতি দেখতে পেয়েছে। পৃথিবীবাসী জানুক পতিত খুনি শেখ হাসিনা ও তার দোসররা মানুষকে গুম করে কীভাবে নির্মম নির্যাতন চালাত।’

বিকেলে শেরপুর শহরের আইএবি মিলনায়তনে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ শেরপুর জেলা শাখা আয়োজিত জেলা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি হাফেজ মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান জুলাই গণহত্যায় জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে সাধুবাদ জানান।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত