মুন্সীগঞ্জ জেলার খ্যাতনামা উপজেলা গজারিয়া। এখানে রয়েছে স্বনামধন্য ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চরপাথালিয়া সালমান ফারসি (রা.) মাদ্রাসা। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সুকীর্তি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এবার এক বছরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৬ জন শিক্ষার্থী কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেছেন। গত বুধবার মাদ্রাসার উদ্যোগে আয়োজিত মাহফিলে হাফেজ ছাত্রদের পাগড়ি এবং তাদের পিতাকে ‘গর্বিত বাবা’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লি মো. শিকদার শিহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে পাগড়ি প্রদান মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন হুফফাজুল কোরআন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাফেজ আবদুল হক, প্রধান মেহমান ছিলেন জামেয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু সাঈদ এবং প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন। এছাড়াও গজারিয়ার স্থানীয় আলেম-ওলামা এবং হাফেজ ছাত্রদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ আল আমিন সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে মো. শিকদার শিহাবুদ্দিন বলেন, ‘হাফেজরা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে দামি মানুষ। তাদের কদর বোঝাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজ যারা হাফেজ হলেন তারা হয়তো বড় হয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মিশে যাবেন। কিন্তু সবার সঙ্গে থাকার পরও তাদের আলাদা একটা পরিচয় থাকবে, তারা কোরআনের হাফেজ। তারা কোরআনের মতো দামি গ্রন্থ সিনায় ধারণ করেছেন। হাফেজের মর্যাদা আমাদের বুঝতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাফেজ আবদুল হক বলেন, ‘হাফেজদের পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠান আসলে একটা ছায়া অনুষ্ঠান মাত্র। এসব হাফেজদের সম্মানীত করা হবে জান্নাতে। এখানে মাদ্রাসা পরিচালকরা হাফেজ ছাত্রদের বাবাকে গর্বিত পিতা অ্যাওয়ার্ড দিয়েছেন, এটাও একটা নমুনা। কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা হাফেজ ছাত্রদের মা-বাবাকে নুরের টুপি পরাবেন। হাফেজদের সম্মান দুনিয়া-আখেরাতে সব জায়গাতেই সবার ওপরে।’
প্রধান মেহমানের বক্তব্যে প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু সাঈদ বলেন, ‘দুনিয়ার অনেক বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় আছে। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজসহ নামকরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা আমরা শুনি। কিন্তু আজ যে শিশুটি কোরআন বুকে ধারণ করল, তার মর্যাদার সমান মর্যাদা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর হবে না। ধর্মীয় বিবেচনায় একজন হাফেজ সব মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাই হাফেজের স্থানও হবে জান্নাতে সবার ওপরে।’
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন বলেন, ‘হাফেজরা শুধু যে ধর্মীয় দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ তা নয়, তারা এখন দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতেও অবদান রাখছেন। একজন হাফেজ যখন ব্যবসায়ী হবেন তিনি সবার মন জয় করবেন তার সততা ও কোরআনি আচরণ দিয়ে। একজন হাফেজ যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবেন তিনি সবার সেরা হবেন তীক্ষè মেধা ও দক্ষতার কারণে। হাফেজরা দেশ ও জাতির সম্পদ। তাদের সঠিক পরিচর্যা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।’
মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ আল আমিন সরকার বলেন, ‘এক বছরে ৫৬ জন ছাত্র হাফেজ হওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় অর্জন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু মুমিনের আসল সফলতা হলো মাওলাকে রাজি-খুশি করা। মাওলা যদি আমাদের ইখলাস ও খেদমতে খুশি হন, তাহলে হাফেজ বেশি হলো না কম হলো, সেটা বড় কথা নয়। আমাদের মাদ্রাসার বয়সও বেশি না। আমরা ২০১৬ সালে শুরু করেছি। আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও শারীরিক সুস্থতা ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও জোর দিয়েছি। বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক যারাই মাদ্রাসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং আছেন, সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। মাদ্রাসার জন্য দোয়া করবেন। আমরা আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসায় চরপাথালিয়া সালমান ফারসি (রা.) মাদ্রাসা আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’