শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সহায়তা দিতে চায় অস্ট্রেলিয়া

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৭ এএম

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে আছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এ ঝুঁকি মোকাবিলায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত প্রশমন ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিপুল অর্থ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে জ্বালানি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচলন ঘটাতে হবে। কিন্তু সেজন্য প্রচুর অর্থ প্রয়োজন। সে অর্থ সংস্থানের জন্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। অস্ট্রেলিয়া নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তাদের সহায়তা দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া : ক্লাইমেট পলিসি অ্যান্ড দ্য গ্রিন এনার্জি ট্রানজিশন’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা জানান। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফরি পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এ সংলাপের আয়োজন করে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুজান রায়েল বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিদ্যমান। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহায়তা বাড়ানোর মাধ্যমে এ সম্পর্ককে আরও উচ্চস্তরে নিয়ে যেতে আগ্রহী অস্ট্রেলিয়া। অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ দূত ক্রিস্টিন টিলি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় প্রকৃতিক গ্যাসের প্রাচুর্য রয়েছে। তাই সেখান থেকে কম খরচে বাংলাদেশ গ্যাস আমদানি করতে পারে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক অগ্রসর। তাই এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সহায়তা নিতে পারে। আর সে সহায়তা দিতে অস্ট্রেলিয়া প্রস্তুত।

অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আইএফসির কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান বলেন, আইএফসি বিভিন্ন দেশে তাদের অর্থায়নকে জলবায়ু অর্থায়নে রূপান্তরিত করছে। কাজেই সেখান থেকে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন সাধনে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, জলবায়ু অর্থায়ন জোরদার করতে বিভিন্ন দেশে ব্লু বন্ড চালু করার বিষয়ে আইএফসি সহায়তা দিয়েছে। বাংলাদেশ এ ধরনের উদ্যোগ নিলে সে ক্ষেত্রেও সংস্থাটি সহায়তা দিতে পারে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের অর্থায়ন প্রয়োজন। তবে আমরা এমন কোনো উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে চাই না, যার মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর ঋণ পরিশোধের চাপ নেমে আসে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের জন্য দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি প্রশমনে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে যেসব অর্থায়ন করা হয়, সেখান থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া খুবই জটিল। তাই বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য অর্থছাড়ের প্রক্রিয়া সহজীকরণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন। কিন্তু এর বিপরীতে সরকার মাত্র ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার অর্থ সরবরাহ করে। বাড়তি আরও ১৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন প্রয়োজন। এ অর্থ সংগ্রহের জন্য দেশীয় উদ্যোক্তা ও বিদেশি বিভিন্ন উৎসের সঙ্গে যোগাযোগের ওপর জোর দেন। এ ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ভালো উৎস হতে পারে বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ১১৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত