বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের চাহিদা অনেক

আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৬:৫৭ এএম

দেশে পেশা হিসেবেই ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের চাহিদা অনেক। ইন্টেরিয়র ডিজাইন বহুমাত্রিক সৃজনশীল পেশা। ডিজাইনারের মূল কাজ হলো গৃহ ও কর্মক্ষেত্রের সাজসজ্জাকে আকর্ষণীয় করে তোলা। 

কর্মক্ষেত্র ও গৃহে আলাদা রঙ ব্যবহার হয়। গাঢ় রঙ নজর কাড়ে আর হালকা রঙ স্নিগ্ধতার প্রতীক। দেয়ালের রঙের সঙ্গে মিল করে পর্দা ও আসবাবপত্র ব্যবহার করা হয়। রঙ ও আসবাবপত্রের সঙ্গে মিল রেখে ফ্লোরে টাইলস করা হয়। পছন্দের আসবাবপত্র ও দেয়ালের রঙ ঘরকে আকর্ষণীয় করে তোলে। এসির সুবিধার্থে এবং ঘরকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ফলস সিলিং ব্যবহার করে সিলিং হাইট কমিয়ে আনা যায়। কর্মক্ষেত্র আরও আকর্ষণীয় করার জন্য অফিসে বিশেষ ধরনের গাছ লাগানো যেতে পারে। এসব বিষয় নিজেকে দক্ষ করার জন্যই প্রয়োজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার।

কাজের ধরন

ঘর বা অফিসের প্রতিটি স্থানকে কাজে লাগিয়ে আসবাব, লাইট, গৃহসজ্জা সামগ্রীর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বাড়ি, অফিস বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে আরামদায়ক ও নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করাই ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রধান কাজ। আর যিনি এ কাজ করেন তিনিই ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। আগে দেশে স্থপতিরাই সাধারণত কোনো ভবন নির্মাণের পাশাপাশি তার ইন্টেরিয়র ডিজাইন করতেন। বর্তমানে স্থপতি ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা পৃথকভাবে কাজ করছেন।

কারা পড়বেন

এইচএসসি পাস করে যে কেউ কোর্সটি করতে পারেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো সৃষ্টিশীল চিন্তা করতে পারা। সেই সঙ্গে থাকতে হবে সূক্ষ্ম পরিকল্পনা। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে গেলে শুধু কাক্সিক্ষত ডিজাইন এঁকে দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়, বরং একজন ডিজাইনারকে তার নিজস্ব ডিজাইন ও প্ল্যানিং ছাড়াও এ কাজে জড়িত কাঠমিস্ত্রি, রঙমিস্ত্রি, ইলেকট্র্রিশিয়ান সবার কাজ ভালোভাবে দেখাশোনা করতে হয় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। উঁচুমানের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার তার নিজস্ব স্বপ্ন, কল্পনা, অনুভূতি দিয়ে একটি সাদামাটা স্থানকেও করে তুলতে পারেন সজীব, প্রাণবন্ত, প্রশান্তিময় এবং সুন্দর।

কোথায় শিখবেন

দেশে ইন্টেরিয়র ডিজাইন শেখানোর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এক বছর থেকে দুই বছর ও ছয় মাস মেয়াদি এসব কোর্সে খরচ পড়বে ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। এসব কোর্সে সাধারণত যেসব বিষয় পড়ানো হয় তাহলো ফ্লোরিং, ফার্নিশিং, ফলস সিলিং, বিদ্যুৎ, আলো, এয়ার কন্ডিশনার, প্লাম্বিং, কিচেন ইত্যাদি।

পেশা হিসেবে

ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হয়ে উন্নত ক্যারিয়ার গড়তে পারেন যে কেউই। আবার বিবিএ, এমবিএ, অনার্স কিংবা গ্র্যাজুয়েশন করার পাশাপাশি ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ওপর শর্ট বা লং-কোর্স করতে পারেন।

অফিস কিংবা বাসা যাই হোক না কেন, ব্যবহারকারীরা চাইবেন সেটিকে নিজের চাহিদা মতো সাজাতে। একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ছাড়া তা কখনই সম্ভব নয়। প্রায় সব রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানই এখন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিয়োগ দিচ্ছে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের কাজের ক্ষেত্র ক্রমেই বাড়ছে। তাই সার্থকভাবে ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোর্সটি করলে সহজেই চাকরি পাওয়া যায়। সাধারণত অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিজাইনার হিসেবে কোনো আর্কিটেকচার ফার্মে বা রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে চাকরি শুরু হবে। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে ম্যানেজারিয়াল পদে উন্নীত হবে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে একটি প্রতিষ্ঠানের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রধান হিসেবে যোগদান করা সম্ভব। তবে বহু ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিজেদের ফার্ম খুলে স্বাধীনভাবে কনসালটেন্সি করাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

চাকরির সুযোগ রয়েছে কনস্ট্রাকশন ফার্ম, রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন করপোরেট গ্রুপ, স্থাপত্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠান, আসবাবপত্র নির্মাতা ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন নামিদামি হোটেল, বিজ্ঞাপন সংস্থাসহ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের স্থাপত্য বিভাগ। এ পেশার মূল সুবিধা হলো, অন্য পেশার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ নিয়ে একে পূর্ণ পেশা হিসেবে নেওয়া যায়।

ইন্টেরিয়র ডিজাইন শেখার পর ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করারও সুযোগ রয়েছে। তবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার জন্য সৃজনশীলতার পাশাপাশি চাই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মানসিকতাও। আমাদের দেশের অনেক তরুণ-তরুণী আপওয়ার্ক (ওডেস্ক) বা ফ্রিল্যান্সার ডট কমে অটো ক্যাড অথবা থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্সের সাহায্যে বিভিন্ন ইন্টেরিয়র আইডিয়া ডিজাইন করে আয় করছেন হাজার ডলার। দেশে অনেক ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যারা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে যাচ্ছে।

উপার্জন

ইন্টেরিয়র ডিজাইন হিসেবে চাকরির শুরুতে ২০ থেকে ৬০ হাজার টাকা মাসিক আয় করা যায়। কাজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতন বাড়তে থাকে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত