সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

মানি এস্কর্টে আগ্রহ কম

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৫, ০৮:২৮ এএম

কোটি টাকা বহনের প্রশ্ন এলে মানুষ পুলিশের সহযোগিতা নেয়। লাখ টাকার ক্ষেত্রে তারা চিন্তাও করে না। পুলিশের এ সেবার নাম মানি এস্কর্ট। অনেকেই জানে না মানি এস্কর্ট কী? পুলিশ বলছে, মানি এস্কর্টে জনসাধারণের অনীহা থাকলেও এর ব্যবহার বেশি হয় ব্যাংক খাতে। ব্যাংকের টাকা বা ভল্ট স্থানান্তরে এই এস্কর্টের ব্যবহার হয়ে থাকে।

জনসাধারণের অনীহা কেন জানতে একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, টাকার জন্য কেউ পুলিশের সহযোগিতা চায় না। আবার অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয়। বেশি টাকা হলেই পুলিশ জানতে চায়, এত টাকা কোথায় পেলেন? তাই ঝামেলায় জড়াতে চায় না কেউ। নিজের টাকা নিজেই বহন করে। রাজধানীতে প্রায়ই বড় অঙ্কের টাকা আনা-নেওয়ার পথে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনা এড়াতে বিনা খরচে পুলিশের মানি এস্কর্ট থাকলেও জনসাধারণ এ সেবায় আগ্রহী নয়।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এসএন মো. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জনগণ এ সেবা নিতে কম আগ্রহী। স্বেচ্ছায় সবাই টাকা বহনের এ সেবা নিলে রাস্তাঘাটে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটত না। কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ী, ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা মোটা অঙ্কের টাকা বহন করতে গিয়ে প্রায়ই ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুনের ঘটনাও ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘এস্কর্ট সেবা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ব্যাংক খাতে। আমরা সবার জন্যই এ সেবা চালু রেখেছি। পরিমাণটা লাখ টাকা বা কোটি টাকা হোক বা সমমূল্যের যা কিছুই হোক।’

ডিএমপির ওয়েবসাইটে মানি এস্কর্ট বিষয়ে বলা হয়েছে, নগরবাসীর আর্থিক লেনদেন ও নগদ অর্থের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সব থানা চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরীতে মানি এস্কর্ট সহায়তা দিয়ে থাকে।

থানার পাশাপাশি রমনা, মতিঝিল, ওয়ারী ও লালবাগ বিভাগে সহায়তাকাক্সক্ষী সংস্থা/ব্যক্তিকে মানি এস্কর্ট সহায়তা দেওয়ার জন্য আব্দুল গণি রোডের পুলিশ কন্ট্রোলরুমে পাঁচটি টিম এবং মিরপুর, গুলশান, উত্তরা ও তেজগাঁও বিভাগে অনুরূপ সহায়তা দেওয়ার জন্য মিরপুর পুলিশ কন্ট্রোলরুমে (পিওএম পুলিশ লাইনস) পাঁচটি টিম সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ব্যাংক, বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রমিকদের বেতনভাতা ও বোনাস প্রদানের লক্ষ্যে এবং গার্মেন্ট কারখানার বড় অঙ্কের অর্থ উত্তোলনকারীদের স্থানীয় থানা, আব্দুল গণি রোডের সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার অথবা মিরপুর পুলিশ কন্ট্রোলরুমে (পিওএম পুলিশ লাইনস) পুলিশ এস্কর্ট গ্রহণের জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।  মানি এস্কর্টে পরিবহনের যাবতীয় খরচ সহায়তা কামনাকারীকে বহন করতে হবে। সহায়তাকাক্সক্ষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট থানা অথবা পুলিশ কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করতে পারেন।

রাজধানীর পুরান ঢাকার বাদামতলী, ইসলামপুর ও বাবুবাজারে অসংখ্য ব্যবসায়ী রয়েছেন, কিন্তু নির্দিষ্ট কয়েকজন ছাড়া আর কেউ ডিএমপির মানি এস্কর্ট সেবা নেয় না বলে জানা গেছে। মানি এস্কর্ট নিয়ে তেমন সাড়া পাওয়াও যায় না। ব্যাংক খাত বাদ দিলে মাসে বড়জোর চার থেকে পাঁচজন মানি এস্কর্ট নেয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব এলাকার অনেক ব্যবসায়ী টাকা বহন করেন নিজেরাই। সে ক্ষেত্রে তাদের নানা বিপদের মুখে পড়তে হয়।

জাকির নামের পুরান ঢাকার এক রঙ ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিভিন্ন সময় মোটা অঙ্কের টাকা বহন করলেও মানি এস্কর্ট নিয়ে কখনো ভাবিনি। আসলে আমার এ বিষয়ে তেমন জানা নেই। তবে কেউ টাকা-পয়সা বহনের ক্ষেত্রে বাড়তি ঝামেলা নিতে চায় না। পুলিশকে জানিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা বহন করা একটু বেশিই ঝামেলার।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলশানের এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রতি মাসে শ্রমিকদের বেতন দিতে ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা বহন করতে হয়। মাঝেমধ্যে মানি এস্কর্ট ব্যবহার করলেও প্রায় ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না। বাড়তি ঝামেলা পছন্দ হয় না। পুলিশ জানতে চায় কত টাকা? কোথায় যাবে? এত টাকার উৎস কী? এসব ঝামেলা মনে হয়।’

ছিনতাই ও খুনের দুর্ঘটনার পরও টাকা বহনের জন্য পুলিশের নিরাপত্তা নেওয়া হয় না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অনেক ব্যবসায়ী জানান, টাকা পরিবহনের জন্য পুলিশের সহযোগিতার দরকার নেই। এরা নানা সমস্যায় ফেলে। সহযোগিতা চাইলে পুলিশ বলে, এত টাকা কোথায় পেলেন? নানা প্রশ্ন করবে, তাই ঝামেলায় জড়াতে চায় না কেউ। নিজের টাকা নিজেরাই বহন করে।

মানি এস্কর্ট মানুষ ব্যবহার করে তাদের মূল্যবান সামগ্রী বহনের ক্ষেত্রে। পুলিশ কেন নানা প্রশ্ন করে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এসএন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক সময় প্রশ্ন চলেই আসে। কারণ আমরা যে টাকা বহন করব তার পরিমাণ সঠিক কি না জানা প্রয়োজন। বেশি টাকা হলে সন্দেহবশতই পুলিশ প্রশ্ন করে।’

মানি এস্কর্টে এত অনীহা কেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মহানগরীতে টাকা বহনের ক্ষেত্রে মানি এস্কর্ট থাকলেও অনেকেই এর ব্যবহার জানে না। অনেকেই টাকা-পয়সার বিষয় পুলিশকে জানাতে চায় না। নিজেরাই লাখ লাখ টাকা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে এবং এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে বহন করে। এ ফাঁকে ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। উন্নত দেশগুলোতে মানি এস্কর্টের ব্যবহার অনেক। মানি এস্কর্টের বিষয়ে জনসাধারণকে জানাতে হবে। ব্যবহারে উৎসাহ দিতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে।’

রমজান ও ঈদে টাকা পরিবহনে এস্কর্ট সেবা দেবে পুলিশ : গত ২ মার্চ ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পবিত্র রমজান মাস ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থ ও বিভিন্ন দ্রব্যের লেনদেন ও স্থানান্তর বাড়বে। কোনো ব্যক্তি, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বেশি পরিমাণ অর্থ ও মূল্যবান দ্রব্য স্থানান্তরের জন্য পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন মনে করলে তাদের ঢাকা মহানগর পুলিশ এস্কর্ট সেবা দেবে। পুলিশ এস্কর্ট সেবাকাক্সক্ষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে যানবাহনের সংস্থান করতে হবে। সেবাকাক্সক্ষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট থানা অথবা পুলিশ কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কন্ট্রোলরুমের নম্বরগুলো হলো ২২৩৩৮১১৮৮, ০২৪৭১১৯৯৮৮, ০২৯৬১৯৯৯৯, ০১৩২০-০৩৭৮৪৫, ০১৩২০-০৩৭৮৪৬। এ ছাড়া জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত