বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

শুল্ক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা চালু

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৫, ০৬:২৮ এএম

আমদানিকৃত পণ্য খালাসে জটিলতা নিরসন এবং পণ্যের কায়িক পরীক্ষায় অতিরিক্ত সময় লাগায় যেমন ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হন তেমনি পণ্য আমদানির আড়ালে রাষ্ট্রের অর্থপাচার নিয়ে নানা ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের। এবার এসব জটিলতা নিরসনে অর্থপাচার, সন্ত্রাসে অর্থায়নের মতো সমস্যা মোকাবিলায় ‘শুল্ক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা’ চালু করেছে সরকার।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জারিকৃত এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন থেকে গত সোমবার এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ‘অর্থনৈতিক ঝুঁকি’ বলতে অর্থপাচার, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নসহ আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং শুল্ক ও কর ফাঁকি কার্যক্রমকে তুলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই বিধিমালা আমদানি পণ্য খালাসকে আরও সহজ করবে। পাশাপাশি অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের মতো অর্থনৈতিক ‘ঝুঁকি’ মোকাবিলায় পণ্য আমদানিতেও নজর রাখা বিদ্যমান রয়েছে। এর অংশ হিসেবে আমদানি করা পণ্যকে চার রঙের ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হচ্ছে।

শুল্ক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২৫-এর আওতায় আমদানি পণ্য সবুজ, নীল, লাল ও হলুদ রঙের শ্রেণিবিন্যাস করে শুল্কায়নের ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া বিধিমালায় আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে শুল্ক ও কর ফাঁকি মোকাবিলার পদক্ষেপও রয়েছে।

ঝুঁকি শ্রেণিবদ্ধ করার ‘উপায়’ সম্পর্কে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঝুঁকির ‘প্রোফাইল’ তৈরি ও পরিচালনা করা হবে। অনলাইনে ঝুঁকি নিবন্ধন তথ্য প্রতিনিয়ত হালনাগাদও হবে। গোয়েন্দা তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ‘উন্নত উপাত্ত’ বিশ্লেষণের কৌশল প্রয়োগ করে লাল, হলুদ, নীল ও সবুজ ঝুঁকিভিত্তিক লেনে পণ্য চালান শ্রেণিবদ্ধ হবে।

হলুদ লেনের ক্ষেত্রে আমদানি করা পণ্যের চালানে ‘কায়িক’ পরীক্ষা ছাড়া কেবল পণ্যসংক্রান্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করা হবে। সবুজ লেনের ক্ষেত্রে কোনো কায়িক পরীক্ষা হবে না; দেখা হবে না কাগজপত্রও। নীল লেনের ক্ষেত্রে কায়িক পরীক্ষা ও কাগজপত্র যাচাই ছাড়াই পণ্য চালান খালাস হবে। কিন্তু সেটা নিরীক্ষার জন্য বিবেচিত হবে। আর লালের ক্ষেত্রে শতভাগ ‘কায়িক’ পরীক্ষা হবে। দেখা হবে কাগজপত্রও।

বিধিমালায় বলা হয়, সিআরএমসি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে ঝুঁকির প্রবণতা ও প্রকৃতি নির্ধারণ করে সেগুলো বিশ্লেষণ করবে। জরিপ ও গবেষণাও আছে। এটি সব শুল্ক স্টেশন ও বন্ড কমিশনারেটের জন্য দৈবচয়নের ভিত্তিতে চালান নির্বাচনের মানদ- নির্ধারণ করবে।

এতে আরও বলা হয়েছে সময়ে সময়ে মানদ-গুলো হালনাগাদ করবে; ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের কার্যকারিতায় নজর দেবে, সেগুলো বোর্ডকে জানাবে, সমন্বয় করবে। বিভিন্ন কার্যক্রমের ফল পর্যালোচনার দায়িত্বও পালন করবে তারা।

সিআরএমসি নামের সত্তাটি যেকোনো সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, আমদানি ও রপ্তানি সম্পর্কিত যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। তথ্য বিশ্লেষণের প্রয়োজনে অন্যান্য সংস্থার সহায়তাও নিতে পারবে তারা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে থেকে বা গোপন তথ্যদাতাদের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য সংগ্রহ করবে। বিশ্লেষণের পাশাপাশি এসব তথ্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মানদ- হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশের নেওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণে রাজস্ব খাতে সংস্কারের যেসব শর্ত রয়েছে, তাতে শুল্কে ‘রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট’ চালুর কথা বলা আছে।

এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহপূর্বক তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঝুঁকি প্রবণতা ও

প্রকৃতি নির্ধারণ করবে। আইন অনুযায়ী যেকোনো সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা আমদানি ও রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রয়োজনে তথ্য বিশ্লেষণে অন্যান্য সংস্থার সহায়তা গ্রহণ করতে পারবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত