টাইব্রেকারে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিয়েছে লিভারপুল। অ্যানফিল্ডে পিএসজির বিপক্ষে ম্যাচটি গোলের দেখা পেলেও শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে গড়ায়, যেখানে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। আর এই রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের হতাশার প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকল ডারউইন নুনেজের পারফরম্যান্স।
লিভারপুলের উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার পুরো মৌসুমেই ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগছেন। আজও তার পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নামলেও দলের আক্রমণে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি তিনি। বরং তার অসংলগ্ন খেলা, ভুল পাস ও বোঝাপড়ার অভাব বারবার দলকে বিপাকে ফেলেছে।
টাইব্রেকারে লিভারপুলের দ্বিতীয় শটটি নিতে এগিয়ে আসেন নুনেজ। কিন্তু তার নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন দোন্নারুম্মা। লিভারপুলের সমর্থকরা তখন থেকেই যেন বুঝতে পারছিলেন, ম্যাচের ভাগ্য কোন দিকে মোড় নিতে যাচ্ছে।
বিবিসি রেডিও ৫ লাইভে ম্যাচ বিশ্লেষক ও সাবেক লিভারপুল ডিফেন্ডার স্টিফেন ওয়ারনক বলেন, ‘নুনেজ যখন পেনাল্টি নিতে যাচ্ছিলেন, তখনই লিভারপুল সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি ছিল। তিনি মাঠে নেমে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি, তাই তার পেনাল্টি নেওয়ার সময় একধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল।’
এই ম্যাচে লিভারপুলের প্রথম একাদশে ছিলেন না নুনেজ। ৭৩তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামেন তিনি, তবে মাঠে নেমেই ছিলেন এলোমেলো। একাধিক ভুল পাস, বোঝাপড়ার ঘাটতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ‘এটা এমন এক পারফরম্যান্স ছিল, যেখানে মনে হচ্ছিল তিনি যেন নিজের ওপরই বাড়তি চাপ দিয়ে ফেলেছেন,’ উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্লেষণে।
লিভারপুল কোচ আরনে স্লট সম্প্রতি প্রকাশ্যেই নুনেজের পারফরম্যান্স নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। ওলভারহ্যাম্পটন ও অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ম্যাচে তার পরিশ্রমের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন স্লট। তবে আজকের ম্যাচে পরিশ্রমের ঘাটতি না থাকলেও তার খেলায় আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল স্পষ্ট।
লিভারপুল সমর্থকরাও ম্যাচ শেষে হতাশা প্রকাশ করেছেন। নুনেজের ভুলগুলো যেন ম্যাচের শেষে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যদিও তিনিই দলের বিদায়ের একমাত্র কারণ নন, তবে তার মিস করা স্পট কিক ও অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সের কারণে সমালোচনা আরও প্রবল হয়েছে।
এই পরাজয়ের পরই প্রশ্ন উঠেছে, আসন্ন দলবদলের মৌসুমে নুনেজের ভবিষ্যৎ কী হবে? তার জায়গায় লিভারপুল নতুন কোনো স্ট্রাইকার আনবে কি না, সেটিও আলোচনায় আসতে শুরু করেছে।
এদিন ভাগ্যও যেন লিভারপুলের পাশে ছিল না। ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের চোট, জারেল কোয়ানসাহর পোস্টে লেগে ফিরে আসা শট—সব মিলিয়ে দুর্ভাগ্যের ছাপ ছিল স্পষ্ট। পিএসজি অবশ্য শুরু থেকেই দাপট দেখিয়ে খেলেছে। তাদের গোছানো রক্ষণ, গতিময় আক্রমণ ও দোন্নারুম্মার দুর্দান্ত গোলরক্ষার কল্যাণেই তারা শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছে।
চ্যাম্পিয়নস লিগে এবারো লিভারপুলের স্বপ্নভঙ্গ হলো শেষ ষোলোতেই। তবে সামনে তাদের বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করছে—কারাবাও কাপের ফাইনালে নিউক্যাসলের মুখোমুখি হবে তারা। সেখানে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।