রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

সুইজারল্যান্ডের বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশে রমজান

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৬:১৫ এএম

সুইজারল্যান্ডে ৪ লাখ মুসলমানের বসবাস, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬ ভাগ। এ দেশে মুসলমানরা রমজান মাসকে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালনের চেষ্টা করেন এবং ধর্মীয় দায়িত্ব ও সুইস সমাজের ধর্মনিরপেক্ষ জীবনধারার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখেন। তারা রমজানের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক গুরুত্ব অটুট রাখেন এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য বজায় রেখে সুইস সমাজের বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেন, যা তাদের বিশ্বাসের প্রতি গভীর নিষ্ঠা এবং সমাজে সুসংহত জীবনধারার প্রতিফলন।

এ দেশে গ্রীষ্মকালে প্রায় ১৬ ঘণ্টারও বেশি রোজা রাখতে হয়, যা রোজাদারদের জন্য কিছুটা কষ্টকর। রমজান মাসে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা তাদের দৈনন্দিন রুটিন এমনভাবে সামঞ্জস্য করেন যাতে তারা কাজ ও ধর্মীয় দায়িত্ব উভয়ই পালন করতে পারেন। জুরিখ, জেনেভা ও বাসেল শহরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলমান বসবাস করেন। এসব শহরের মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারগুলো ইফতারের জন্য বিশেষ আয়োজন করে। রোজাদাররা বাড়িতে বা মসজিদে একত্র হয়ে ইফতার করেন। ইফতারির খাবার সাধারণত তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুসারে তৈরি করা হয়। সেগুলোর মধ্যে তুর্কি, বসনিয়ান, আরব বা দক্ষিণ এশীয় খাবার অন্যতম।

জেনেভা মসজিদসহ বেশ কিছু মসজিদে সম্মিলিত ইফতারের আয়োজন করা হয়, যা মুসলমানদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলতে সহায়তা করে। সুইজারল্যান্ডে প্রকাশ্যে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম থাকলেও মুসলিম সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় উৎসব এমনভাবে পালন করেন, যাতে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান বজায় থাকে। রমজানে অনেক মুসলমান তারাবির নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যান। তবে শব্দ নিয়ন্ত্রণ আইন ও স্থান সংকটের কারণে সব মসজিদ বড় জামাতের আয়োজন করতে পারে না। কয়েকটি পরিবার মিলে হল ভাড়া করেও তারাবির নামাজের ব্যবস্থা করে।

জুরিখ অ্যাসোসিয়েশন অব ইসলামিক অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত আছেন ইসমাইল আমিন। সুইস ইনফোকে তিনি বলেন, ‘রমজান মাসের দিনের বেলায় পানাহার ও কামাচার ত্যাগ করে আমরা রোজা পালন করি। মহান আল্লাহ এ মাসে যে অফুরান বরকত দান করেছেন, তা যথযথভাবে অর্জনের জন্য আমাদের উচিত ভালো কাজের চেষ্টা করা, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, শত্রুদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্য সদস্যদের খোঁজখবর নেওয়া।’ সুইজারল্যান্ডের ইসলামবিষয়ক গবেষকদের দলনেতা স্টেফান লাথিয়ন বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডের পরিস্থিতি সম্ভবত ইউরোপের বাকি অংশের প্রতিফলন। অর্থাৎ ইউরোপের অধিকাংশ গবেষকদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মুসলমানদের প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ রমজান পালন করে। তবে প্রকৃত অর্থে সক্রিয় মুসলমানের সংখ্যা ১৫-২০ শতাংশের বেশি নয়। অনেক মুসলমানের জন্য রমজান কেবলমাত্র একটি সাংস্কৃতিক বিষয়। হয়তো এটাই একমাত্র সময় যখন তারা মসজিদে যায়। কিন্তু অন্যদের জন্য এটি এর চেয়ে অনেক বেশি কিছু। কারণ অন্য সময়ের চেয়ে এই সময়ে ধর্মীয় অনুশীলন অনেক বেশি করা যায়।’

বর্তমানে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ৪ লাখ। এর মধ্যে ৮৮.৩ শতাংশ প্রবাসী মুসলিম। প্রবাসীদের ৬০ শতাংশ সাবেক যুগোসøাভিয়ার নাগরিক (বিশেষ করে বলকান ও কসোভার নাগরিক), ৬ শতাংশ তুরস্ক এবং ৫ শতাংশ আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আগত। মুসলমানদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার স্থানীয় অধিবাসী। সুইজারল্যান্ডে প্রথম মসজিদ স্থাপিত হয় ১৯৬৩ সালে। ১৯৭২ সালে সুইজারল্যান্ডে ইসলামি সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই সংগঠনের একটি বিধিমালা তৈরি করা হয়, যা পরবর্তী সময় সুইস সরকারের অনুমোদন লাভ করে। এই সংগঠনের কমিটি সুইজারল্যান্ডে মসজিদ ও ইসলামি সেন্টার নির্মাণের অনুমোদন পায়। সৌদি আরবের বাদশাহ কিং ফয়সাল ইবনে আবদুল আজিজ আস-সৌদ ১৯৭৩ সালে সুইজারল্যান্ড সফর করেন। তিনি ইসলামি সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেন্টারের মসজিদটি বেশ বড় এবং এখানে কয়েকশ মুসলমানের একত্রে নামাজ আদায় করার ব্যবস্থা আছে। সেন্টারে একটি লাইব্রেরি, একটি ইসলামি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুসলিম ছেলে-মেয়েদের এখানে বিনা খরচে লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত