মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ঈদে এবারও টিকিট কালোবাজারির শঙ্কা

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৬:৫৪ এএম

ঈদযাত্রায় প্রতিবছর বাস ও ট্রেনের আগাম টিকিটের জন্য কালোবাজারি চক্রের হাতে ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীদের। এবারও এ নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। এরই মধ্যে আসছে ঈদুল ফিতরে সড়ক ও রেলপথে যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে গত রবিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। সেখানেও টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি ওঠে। সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান কালোবাজারি ঠেকাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত সময়ে টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এসব চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন কারসাজি করে বাস ও ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করত। টিকিট কালোবাজারি বন্ধের দাবিতে গত ৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে মানববন্ধন হয়েছে। ওই মানববন্ধন শেষে ফেরার পথে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে হামলায় আহত হয়েছেন চার শিক্ষার্থী।

এবারও ঈদযাত্রায় টিকিট কালোবাজারি নিয়ে শঙ্কিত বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. রেজওয়ান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঈদযাত্রায় বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর এক দিনের মাথায় সব বিক্রি হয়ে যায়। ফলে ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় ১ হাজার টাকার টিকিট ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে বাধ্য হয়ে কিনতে হয়। সব পরিবহনেই একই অবস্থা থাকে।’

ঈদের সময় টিকিট কালোবাজারিদের কাছে প্রতিবছরই জিম্মি থাকতে হয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মো. হৃদয় নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি রংপুর। ঈদ এলেই গণপরিবহনগুলো ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করে। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তো অনেক কিছুই পরিবর্তন করেছে। এবার দেখার অপেক্ষায় আছি, টিকিট কালোবাজারি থেকে যাত্রীদের রেহাই দিতে পারে কি না।’

গত রবিবারের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। সংশ্লিষ্টরা জানান, সভায় ঈদযাত্রা স্বস্তিকর করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। ঈদযাত্রার সময় সড়ক যেন ঠিক থাকে এবং টিকিট কালোবাজারি চক্রের বিষয়েও হয়েছে আলোচনা। সভায় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ঈদের সময় রাজধানীর গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, মহাখালী, সায়েদাবাদ এবং গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় সিসিটিভি বসানো হবে এবং পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সংযোগ করে সেগুলো মনিটর করা হবে। এ ছাড়া সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালও সিসিটিভি মনিটরের আওতায় থাকবে। এজন্য বিআরটিএ এবং সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঈদযাত্রার সব বিষয় নিয়ে মন্ত্রণাালয়ের সঙ্গে একটি মিটিং হয়েছে। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এবার বাসের জন্য অগ্রিম টিকিট জনপ্রতি পাঁচটি কাটা যাবে। আমাদের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বাস টার্মিনালে মনিটরিং করবেন। বাস মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া আছে তাদের লোকজন যেন টিকিট কালোবাজারিতে না জড়ান। কেউ জড়ালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। তাছাড়া আমাদের সমিতি থেকেও ঈদযাত্রায় যেন সব কিছু স্বাভাবিক থাকে সেজন্য বাস মালিকদের সঙ্গে একাধিক মিটিং করা হবে। আমরাও চাই কোনো কালোবাজারি যেন না হয় এবারের ঈদযাত্রায়।’

এবারও ঈদযাত্রার টিকিট নিয়ে কালোবাজারি চক্র সক্রিয় হতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল সব কিছু। এখন দেখা যাচ্ছে আরও কিছু পক্ষ তৈরি হয়েছে। এখন এই সরকারের উচিত আমাদের যাত্রী প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ভিজিট করা, যেখানে কালোবাজারি থাকবে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেওয়া। পুরো টিকিট ব্যবস্থাকে ভালোভাবে মনিটারিং করে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। তা না হলে প্রতিবছরের মতো এবারও টিকিট কালোবাজারিদের কাছে জিম্মি থাকবে যাত্রীরা।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত