জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যা মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের অন্যতম সহযোগী গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তারের পর ছিনিয়ে নিয়েছেন সিকিউরিটি গার্ডরা। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর লালমাটিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ। তখন কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড পুলিশের ওপর হামলা করে তাকে ছিনিয়ে নেন।
ঘটনার সময়কার ভিডিও ফুটেজ দেখে ও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও পুলিশ বিষয়টি আংশিক স্বীকার করেছে। ঘটনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বলেন, ‘সকালে মোহাম্মদপুর থানার একটি টিম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৫ মামলার আসামি গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করতে লালমাটিয়া এলাকায় যায়। কিন্তু আসামির লোকজন মব সৃষ্টি করে আমাদের পুলিশের ওপর হামলা করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ আসামিকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শরীফুল বলেন, ‘বেলা ১১টায় বেশ কয়েকজন অফিসারসহ পুলিশের একটি টিম রাস্তা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় আশপাশে থাকা আট থেকে ১০ জন সিকিউরিটি গার্ড ও আশপাশে কয়েকজন এসে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা করে। তাদের ওপর হামলার পরও তারা ওই লোককে হাতকড়া পরায়। তখন পুলিশ দেখলাম ফোনে কার সঙ্গে কথা বলার পর তার হাতকড়া খুলে দিয়েছে। পরে পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারলাম, ওই লোকের নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের হত্যার অভিযোগে একাধিক মামলা আছে। মনে হয়েছে সিকিউরিটি গার্ড ও স্থানীয় কয়েকজন মিলে পুলিশকে মেরে ফেলবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে তারা।’
পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া সিকিউরিটি গার্ডদের মধ্যে একজন হলেন দেলোয়ার। তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে এভোরেজ স্কুলের মালিক আমাদের স্যার গোলাম মোস্তফা স্কুল থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়িতে উঠছিল। এ সময় পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিল। ওই সময় তার এক হাতে হাতকড়াও লাগায়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা যারা ছিলাম সবাই পুলিশকে ঘেরাও করে ধরে তাকে ভেতরে নিয়ে যাই। তখন পুলিশের সঙ্গে আমাদের লোকজনের ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময় মোবাইলে আমাদের কর্র্তৃপক্ষ থানার ওসিকে বিষয়টি জানালে পুলিশ তার হাতকড়া খুলে দিয়ে চলে যায়।’ প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের অভিযোগ মোহাম্মদপুর থানার ওসির সঙ্গে যোগসাজশে এই হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারের পরেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান বলেন, ‘আমি ভোর ৫টায় ঘুমাতে যাই। এর মধ্যে ১১টার পর আমাকে ফোন করে এক পুলিশ সদস্য জানায় তারা গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে কয়েকজন গার্ড তাদের ওপর হামলা করে আসামিকে ছিনিয়ে নেন। এর বাহিরে আমি কিছু জানি না।’
এই বিষয়ে ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের একটা টিম একজন আসামিকে ধরতে গেলে সেখানকার সিকিউরিটি গার্ডরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি বুঝে সেখান থেকে আমাদের টিম চলে আসে। আমরা পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখছি। এজন্য একজন অতিরিক্ত উপকমিশনারকে দায়িত্ব (তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে) দেওয়া হবে।’