জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সাতটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে। এ ছাড়া ১৬টি রাজনৈতিক দল সম্পূর্ণ মতামত দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়েছে। অন্য দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে কমিশন।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এ তথ্য জানিয়েছে। কমিশন গত ৬ মার্চ ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর মতামত চেয়ে একটি ছক পাঠিয়েছিল। দলগুলোকে ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
কমিশনের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে মতামত দেওয়া দলগুলো হলো এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামা ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি,॥ভাসানী অনুসারী পরিষদ, এনডিএম এবং আমজনতার দল। বিএনপিসহ ১৬টি দল মতামত দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়েছে।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, মতামত প্রদানকারী দলগুলোর সঙ্গে আগামী মঙ্গল বা বুধবার আলোচনা শুরু হতে পারে। আলোচনা হবে জাতীয় সংসদ ভবনে, যেখানে প্রতিটি দলের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার জানিয়েছেন, আগামী রবিবার ঐকমত্য কমিশন বৈঠক করে আলোচনা শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন আলোচনা শুরু হতে পারে। যারা ইতিমধ্যে মতামত দিয়েছেন, তাদের নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। এরপর যারা মতামত দেবেন, ক্রমান্বয়ে তাদের আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনা। এজন্য গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বিচার বিভাগ সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসব কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এরপর কমিশনের সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি পাওয়া সুপারিশগুলোর ভিত্তিতে একটি নীতি-দলিল তৈরি করা হবে, যা ‘জুলাই সনদ’ নামে প্রকাশিত হবে।
কমিশন পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর মতামত জানতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একটি ছক পাঠিয়েছে। প্রতিটি সুপারিশ সম্পর্কে দুটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রথমত, সুপারিশের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি : দলগুলোকে জানাতে বলা হয়েছে, তারা সংশ্লিষ্ট সুপারিশের সঙ্গে একমত কি না। তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে ‘একমত’, ‘একমত নই’, এবং ‘আংশিকভাবে একমত’।
বাস্তবায়নের সময়কাল ও উপায় : সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ছয়টি বিকল্প রাখা হয়েছে। এগুলো হলো ‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এ ছাড়া প্রতিটি সুপারিশের সঙ্গে দলগুলোর জন্য ‘মন্তব্য’ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
বিএনপি মতামত দেওয়ার জন্য সময় চেয়ে বলেছে, শুধু ছকে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানালে বিভ্রান্তির আশঙ্কা রয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, তারা বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে মতামত দেবেন।
