চা বিক্রির টাকায় ৫৪ শতক জায়গার উপর নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা আব্দুল খালেক (৯৭) মারা গেছেন। শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুর দেড়টায় নিজ বাড়ি বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার প্রতিষ্ঠিত নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রফিক।
মরহুম আব্দুল খালেক জানাজা আজ শুক্রবার রাত ১০টায় নিজের করা প্রতিষ্ঠান নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।
জানা যায়, আব্দুল খালেক বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের নলুয়া চাঁদপুর গ্রামের মাক্কু মিয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন।
জানা যায়, ১৯৯৭ সালে সড়কের পাশে ‘নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন আব্দুল খালেক। ব্যক্তিগত জীবনে আবদুল খালেক ছিলেন নিঃসন্তান। ১৯৯৯ সালের ২৮ অক্টোবর স্কুল দেখে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী সখিনা বেগম মারা যান। তখন থেকেই এই স্কুলেই তার বাড়ি-ঘর ছিল। নলুয়া চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয় নামের ওই স্কুলটি ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রামের রাস্তার পাশে একটি চায়ের দোকান তার। পরিবারে তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার বাবা কৃষিকাজ করতেন। একসময় বড় ছেলে হিসেবে তার কাঁধে উঠে পরিবারের জোয়াল। চা দোকানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে সেই জোয়াল টানতে থাকেন তিনি।
খারাপ প্রকৃতির ও অশোভন কথা বলা লোকজনকে দোকানে বসতে দিতেন না। দোকানে বসে কিংবা গ্রামের পথেঘাটে খালেককে খালিক্কা, রহিমকে রহিম্যা কিংবা আনিছকে আনিছ্যা- এভাবে প্রকৃত নামকে বিকৃত করে কেউ ডাকলে তিনি মনে কষ্ট পেতেন। পরে ভাবলেন শিক্ষার অভাবেই গ্রামের মানুষজন বাবা-মায়ের দেওয়া নাম বিকৃত করে ডাকে।
এই গ্রামের ৮০ শতাংশ লোক ছিল নিরক্ষর। কিছু ছেলে-মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়লেও হাইস্কুল দূরে হওয়ায় অধিকাংশের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় এলাকার সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য তিনি জমি দান করে হাইস্কুল করার ঘোষণা দেন। একপর্যায়ে তার দেওয়া ওই জমিতে গ্রামের মানুষ থেকে বাঁশ, কাঠ আর নগদ টাকা চেয়ে এনে গড়ে তুললেন নলুয়া চাঁদপুর উচ্চবিদ্যালয়। শিক্ষক হিসেবে এগিয়ে এলেন গ্রামের কিছু তরুণ ও স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক।