নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারে দেড় শতাধিক সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশে আগেই আপত্তি জানিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। এবার সেসব সুপারিশের বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংস্থাটি মনে করে, সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে ইসির স্বাধীনতা খর্বিত হবে।
গতকাল সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে প্রস্তাবিত সুপারিশসংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ইসি সচিব বলেন, ‘সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে একটি স্বতন্ত্র কমিশন করার কথা বলা হয়েছে। কমিশন মনে করে, এটির প্রয়োজন নেই। সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আসনের সীমানা পুনর্র্নির্ধারণের যে ফর্মুলার কথা বলা হয়েছে, তাতে শহরাঞ্চলে আসনসংখ্যা বেড়ে যাবে। ইসি মনে করে, ভোটারসংখ্যা, জনসংখ্যা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা বিবেচনায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্র্নির্ধারণ করা উচিত।’
আখতার আহমেদ বলেন, ‘সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, নির্বাচনের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সার্টিফিকেশন দিতে হবে। আমরা মনে করি, এর প্রয়োজন নেই। নির্বাচন সম্পর্কে রিটার্নিং অফিসার সন্তুষ্ট না হলে তো ফল দেওয়া হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, এটির গেজেট হচ্ছে, এটাই সার্টিফিকেশন। এমন কোনো মেকানিজম কি আছে যে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সার্টিফাই করতে হবে? কীভাবে দেব? বলা হতে পারে, মেকানিজমটা ডিভাইস করুন। তাতে আরেকটি জটিলতার সৃষ্টি হবে।’
এনআইডি কার্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এনআইডি কার্ড নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ ২০০৭ সাল থেকে এটির ব্যবহার হচ্ছে; নির্বাচন কমিশনের অভিজ্ঞতা হয়েছে ও দক্ষতা তৈরি হয়েছে। কেন এটির পরিবর্তন করা হবে? বরং এটাকে আরও সংহত করা যায়, এর ব্যবহার কীভাবে বহুমুখী করা যায় সেটাই ভাবা উচিত। বর্তমানে ১৮৬টি সংস্থাকে সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে, উপযোগিতা রয়েছে বলেই দেওয়া হচ্ছে।’
সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ইসির দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইসির দায়বদ্ধতা তো আছেই। শর্ত ভাঙলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা নিতে পারে। নির্বাচন শেষ হওয়ার পাঁচ-দশ বছর পর নির্বাচন কমিশনারদের আদালতে দৌড়ানো কি যৌক্তিক? নির্বাচনে জয়ী হবেন একজন, বাকিরা সংক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ করতেই পারেন।’
চিঠিতে কয়টি বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপত্তি কথাটি নিয়ে আমাদের ‘আপত্তি’ আছে। ৮-১০টি বিষয়ে আমরা ভিন্নমত জানিয়েছি।’
স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চিঠিতে মতামত দেওয়ার কারণ কী? স্বাধীনতা খর্বিত হচ্ছে বলেই তো মত ব্যক্ত করেছি। স্বাধীনতা খর্বিত না হলে মত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ত না।’