রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট কাটছে

আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪৭ এএম

অবশেষে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাজারে ভোজ্য তেলের সংকট কাটতে শুরু করেছে। দোকানগুলোয় মিলছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় কমে এসেছে দামও।

নগরীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পবিত্র রমজান শুরুর আগে থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল শূন্য থাকা দোকানগুলোয় এখন শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সারি সারি বোতল। এক লিটার, দুই লিটার, তিন লিটার, পাঁচ লিটারের বোতলে পাওয়া যাচ্ছে সয়াবিন তেল। বিক্রিও হচ্ছে বোতলের গায়ে লাগানো লেবেলের দামে।

প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছিল ভোজ্য তেলের সংকট। এ সময় হাতে গোনা কিছু খুচরা দোকানে এক লিটার কিংবা দুই লিটারের অল্পকিছু তেলের বোতল মিললেও বাড়তি দাম দিয়ে তা কিনতে হয়েছে সাধারণ ভোক্তাদের। এক লিটার তেলের বোতলের গায়ে ১৭৫ টাকা দামের লেবেল লাগানো থাকলেও দোকানে বিক্রি করা হতো ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। দুই লিটারের বোতল কিনতে হয়েছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায়। তিন লিটার কিংবা পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়াই যেত না। ওই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ মানুষ খোলা সয়াবিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সুযোগ বুঝে খোলা সয়াবিনের দামও বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় প্রতি কেজি খোলা তেলের দামও ওঠে ২০০ টাকায়।

নগরীর আসকার দীঘিরপাড় কাঁচা বাজারের খুচরা দোকানদার সুধীর দেব জানান, ডিলারদের কাছ থেকে সরবরাহ না পাওয়ায় বেশ কিছুদিন বোতলজাত ও পলিব্যাগের সয়াবিন তেল ছিল না। রোজার আগে কিছু কিছু ডিলার বোতলজাত তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে নিম্নমানের বিভিন্ন পণ্য কেনার শর্ত জুড়ে দেন। শর্ত মেনে তেল নিলেও বাড়তি দামে তা বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, রমজানের প্রথম দুই সপ্তাহ এই সংকটের মধ্যে গেলেও এখন ডিলারদের কাছ থেকে বোতলজাত ও পলিব্যাগের তেল সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। এক লিটার, দুই লিটার, তিন লিটার, পাঁচ লিটার সাইজের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেল আছে দোকানে। বোতলের গায়ে লেখা দামেই তা বিক্রি করা হচ্ছে।

নগরীর ব্যাটারিগলি এলাকার মুদি দোকানদার আবদুল হামিদ বলেন, ‘প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ডিলাররা কোনো বোতলজাত তেল সরবরাহ করেননি। কোনো শর্ত মেনেও তাদের কাছ থেকে তেল নিইনি। যে কারণে এতদিন ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করতে পারিনি। চলতি সপ্তাহ থেকে ডিলাররা আবারও বোতলজাত তেল সরবরাহ দিচ্ছেন। দামও রাখছেন ঠিক আগের মতো। আমরাও ভোক্তাদের কাছ থেকে বাড়তি দাম নিচ্ছি না।’

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করে থাকেন। এতদিন কোম্পানি থেকে বোতলজাত তেল সরবরাহ পাওয়া যায়নি। যে কারণে বাজারে তেলের সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়েছিল। এখন কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ দিচ্ছে। তাই সংকট কেটে যাচ্ছে।

তবে অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানি থেকে তেল সরবরাহ পাওয়া সত্ত্বেও ডিলাররা বাড়তি মুনাফার আশায় বাজারে এক ধরনের সংকট তৈরি করেছিলেন। আবার খুচরা দোকানদাররাও একই সুযোগ কাজে লাগাতে নিজস্ব গুদামে তেল রেখে দিয়ে সংকটের কথা বলে ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি দাম নিতেন। চলতি বছর রোজার শুরু থেকেই তেলের সংকট নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন। একপর্যায়ে পাইকারি ও খুচরা বাজারে ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। নির্ধারণ করে দেওয়া দর কার্যকর করতে একযোগে মনিটরিংয়ে নামে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানকালে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে না থাকলেও গুদামে মজুদ করে রাখা তেলের সন্ধান মেলে। এজন্য জরিমানাও করা হয় একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক ফয়েজ উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন কোম্পানি ডিলারদের কাছে যে পরিমাণ তেল সরবরাহ করে, তা নিয়ে যদি কারসাজি না হয়, তাহলে তেলের এত সংকট হতো না। তিনি বলেন, ‘আমরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযানকালে দেখেছি দোকানে সয়াবিন তেলের বোতল নেই, কিন্তু তার গুদামে প্রচুর পরিমাণ তেল মজুদ রয়েছে। মূলত এভাবেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে তেলের দাম বাড়িয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত