দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে উদ্বোধন হলো যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম ও আধুনিক রেলসেতু। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে টাঙ্গাইলের ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সেতুর উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।
এ সময় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানের বাংলাদেশ নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মি. সাইদা সিনচি এবং জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক মি. ইতো তেরুয়াকি। রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়।
জানা গেছে, ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে প্রায় ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুটি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের সুযোগ দেবে, যা পূর্বের যমুনা সেতুর তুলনায় সময় সাশ্রয়ী।
ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার শাহীন মিয়া জানান, সেতু পার হতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে ৩ মিনিট, যা আগে ২০ মিনিট সময় নিত।
রেলওয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ার তানভীরুল ইসলাম বলেন, ‘যমুনা রেলসেতু শুধু একটি প্রকৌশলগত বিস্ময়ই নয়, এটি দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করবে। সেতুর ডেকে গ্যাস পাইপলাইন ও বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে আরও ত্বরান্বিত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই সেতুটি ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করবে এবং ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ও বাণিজ্যকে আরও গতিশীল করবে। ভবিষ্যতে এই সেতু দিয়ে ৮৮টি ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে, যা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।’
যদিও বর্তমানে সিঙ্গেল লেন চালু হওয়ায় সেতুটির পুরোপুরি সুফল সহসাই মিলবে না উল্লেখ করে রেলওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ডাবল লেনের সুবিধা পেতে হলে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ডাবল লেনের রেললাইন তৈরি করা হবে, যা যোগাযোগ, বাণিজ্য ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।’
যমুনা রেলসেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সংযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এই সেতু দেশের সম্ভাবনাময় অগ্রযাত্রার প্রতীক হয়ে উঠেছে।