রোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

নিউজিল্যান্ডের ক্রমবর্ধমান মুসলিম সম্প্রদায়ে রমজান

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩১ এএম

নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা ধর্ম পালনে অনেক যতœবান। বিশেষ করে অমুসলিমদের মধ্যে ইসলাম প্রচারে তারা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। কয়েকটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, সংখ্যায় কম হয়েও নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা ধর্মচর্চা ও ইসলাম প্রচারে অনেক এগিয়ে। নিউজিল্যান্ডের প্রধান শহরগুলোতে বেশ কয়েকটি মসজিদ, ইসলামিক সেন্টার ও একাধিক ট্রাস্ট রয়েছে। অকল্যান্ডে দুটি ইসলামিক স্কুল রয়েছে। এ ছাড়া অকল্যান্ডে প্রায় ১৫টি ইসলামিক সেন্টার, কয়েকটি মসজিদ ও একটি ট্রাস্ট রয়েছে। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, নিউজিল্যান্ডে প্রায় ৭৫ হাজার মুসলিম বসবাস করেন। যেখানে ২০১৭ সালে মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার। আর ২০১৩ সালে ছিল ৪৬ হাজার। সুতরাং নিউজিল্যান্ডে মুসলমানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

রমজান ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র মাস, যা বিশ্বের মুসলমানরা গভীর ভক্তি ও সামাজিক সংহতির মাধ্যমে পালন করে থাকেন। নিউজিল্যান্ডের ক্রমবর্ধমান মুসলমানরাও এর ব্যতিক্রম নন। যদিও তারা সংখ্যালঘু, তবু এই পবিত্র মাসে তারা রোজা, নামাজ এবং দান-সদকার মতো ধর্মীয় কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নিউজিল্যান্ড দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত, তাই রোজার সময়কাল মৌসুম অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। শীতকালে সর্বনিম্ন প্রায় ১১ ঘণ্টা এবং গ্রীষ্মকালে প্রায় ১৬ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়। নিউজিল্যান্ডের মসজিদ এবং ইসলামিক সেন্টারগুলো রমজান পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ আল-নূর এবং অকল্যান্ডের পনসনবি মসজিদের মতো বড় মসজিদগুলো প্রতিদিন ইফতার, তারাবির নামাজ এবং ইসলামি আলোচনাসভার আয়োজন করে। এসব সমাবেশ মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ জোরদার করে। অনেক পরিবারই মসজিদে ইফতার করতে পছন্দ করে, যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করা হয়। রমজান দানের মাস, আর নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা এ সময় দান-সদকা ও জনকল্যাণমূলক কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। নিউজিল্যান্ড ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং স্থানীয় মসজিদ কমিটিগুলো খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি চালায়, গৃহহীনদের জন্য খাবার সরবরাহ করে এবং দরিদ্রদের সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহ করে। নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা রমজান পালনে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। যেহেতু দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা কম, তাই কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর রুটিন রোজার সময় অনুযায়ী নির্ধারিত নয়। অনেক মুসলিম পেশাজীবী ও শিক্ষার্থী নিজেদের ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজের ভারসাম্য বজায় রাখেন। তবে বেশিরভাগ কর্মসংস্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রোজার বিষয়টিকে সম্মান জানায় এবং নামাজ ও ইফতারের সময় বিরতি দিয়ে থাকে। নিউজিল্যান্ডের ‘মাল্টিকালচারাল অ্যাসোসিয়েশন হকস বে’-এর সভাপতি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য রিজওয়ানা লতিফ। রমজান পালন সম্পর্কে তিনি স্থানীয় এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রমজান আমাদের একতাবদ্ধ করে, আমাদের ভেতর সহনশীলতা তৈরি করে এবং পরকালের পাথেয় অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ বয়ে আনে।’ বিশ বছর বয়সী আলিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি রোজা রাখতে পেরে অত্যন্ত আনন্দ বোধ করছি। রোজা আমাদের আত্মিকভাবে পরিচ্ছন্ন রাখে।’

মানাওয়াতু মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জুলফিকার বাট। তিনি জানান, প্রতি বছর রমজানের চাঁদ দেখার জন্য প্রায় ১০০ জন মানুষ পামার্সটন নর্থের আনজাক পার্কে একত্র হন। সঙ্গে শিশুদের রাখা হয়, যেন তাদের চাঁদ দেখার গুরুত্ব বোঝানো যায়। তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডে রমজান পালন করা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক সহজ। কারণ এখানকার আবহাওয়া অনুকূলে থাকে। কর্মক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। আমার সহকর্মীরা জানেন যে, আমি রোজা পালন করছি, তাই তারা আমাকে কিছু খাওয়ার জন্য অফার করা থেকে বিরত থাকেন। এমনকি তারা রমজানের সময় আমার সামনে না খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকেন।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত