বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

তারেক রহমান বললেন

উগ্রবাদ প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে ফিরবে ফ্যাসিবাদ

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ০৬:২৭ এএম

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, ‘ধর্মীয় উগ্রবাদী অপতৎপরতা ও চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক বিশ্বে ইমেজ সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চরিত্র সমুন্নত রাখতে চরমপন্থা ও ধর্মীয় উগ্রবাদী অপশক্তিকে প্রতিহতের পাশাপাশি গণহত্যাকারী পলাতক মাফিয়া চক্রকে বিচারের সম্মুখীন করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা শক্তিশালী করাই হবে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক পক্ষের শক্তির আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।’

গতকাল বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে রাজনীতিবিদদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদের নিরাপত্তাহীন রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। সরকার, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি কিংবা অন্য কোনো কাজে বেশি মনোযোগী থাকার কারণে আমাদের মা-বোন-কন্যাদের নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে কি না, এ বিষয়টি গভীরভাবে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রে একটি সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক নীতি কিংবা রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা দীর্ঘস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি। সুতরাং রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী এবং টেকসই ও কার্যকর রাখতে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। দেড় দশক ধরে ক্ষমতাহীন জনগন এবার নিজেদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে প্রস্তুত। জননিরাপত্তা নিশ্চিত এবং জনদুর্ভোগ কমানোর সব পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে, এটাই গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রত্যাশা।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বৈষ্যমহীন নিরাপদ গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নির্বাচিত জাতীয় সরকারের মাধ্যমেই বিএনপি রাষ্ট্র ও রাজনীতি মেরামতের কাজগুলো সফল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেই লক্ষ্য পূরণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার করবে, যা অতীতেও আমরা জাতির সামনে কমিট করেছি। গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলো সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের প্রতি, গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহ্বান, বীর জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথে গড়ে ওঠা ঐক্যবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে এখনো। আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি, স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না ইনশাআল্লাহ।’ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং ফ্যাসিস্ট সরকার পতন আন্দোলনে সব শহীদ ও আহতদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন হয়েছে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলের কাছে পৌঁছে গেছে। আপনারা নিশ্চয়ই তা গভীরভাবে পর্যালোচনা করবেন, দেখবেন, পরীক্ষা করবেন। এই দেশে জাতির জন্য যেটা প্রয়োজন, বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় ইতিহাস, তার কৃষ্টি, ঐতিহ্য, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুকে নিয়ে যেন আমরা সামনের দিকে এগোতে পারি। এটাই হওয়া উচিত আমাদের সবার লক্ষ্য। এ কথাগুলো এজন্য তুললাম আজকে বিভিন্নরকম কথাবার্তা বিভিন্ন মিডিয়ায় চলে আসছে, সামাজিকমাধ্যমে বিভিন্ন কথা উঠছে। আমাদের মধ্যে বিভিন্নরকম বিভ্রান্তি ছড়ানো শুরু করেছে। গণতন্ত্রের পথে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে আমাদের সমালোচনা করেন। আমরা দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছি। দ্রুত নির্বাচনের কথা আমরা খুব পরিষ্কার করে বলছি এজন্য যে, ন্যূনতম সংস্কার করে যেন জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক পার্লামেন্ট আমরা তৈরি করতে পারি, একটা সরকার গঠন করতে পারি, যারা সেখানে নির্ধারিত করবেন পরবর্তী সংস্কারগুলো কীভাবে হবে, কী রূপে হবে।’

এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘একটা জিনিস অনুধাবন করতে হবে, দেশটা আমাদের। ভারতের দালালি করে কোনো লাভ হবে না। আমরা বহুদিন দালালি করেছি বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার ভারতের পেঁয়াজও নাই, চালও নাই। কিন্তু বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। সুতরাং আমাদের আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হতে হবে, হুজুরে পাক (সা.) ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আমরা আর কখনো স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারব না।’ তারেক রহমানসহ তরুণ নেতৃত্ব যদি অভিজ্ঞতা নিয়ে এগোতে পারে তাহলে এ দেশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না বলে মন্তব্য করেন অলি।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য এখন জাতীয় ঐক্যই হবে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এ লক্ষ্য রেখেই যার যার জায়গা থেকে আমাদের চারটি বিষয়ে এক থাকতে হবে। জাতীয় ঐক্যের জন্য আমি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলছি। এক. বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। এতে কোনো আপস নেই। দুই. একটি টেকসই গণতন্ত্র। তিন. একটি ফেয়ার ইলেকশন এবং চার দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে পতিত স্বৈরাচার, লুটেরা আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে না।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘একটি কথা বলা হচ্ছে, ইনক্লুসিভ ইলেকশন। আমি মনে করি, এই ইনক্লুসিভ ইলেকশন হওয়ার মতো বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার মতো রাজনৈতিক দল বর্তমানে দেশে রয়েছে। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ যে শক্তিকে পরাজিত করেছে, মুজিববাদ ও আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের বিদায় করেছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে সেই মুজিববাদী রাজনীতির স্থান আসলে হবে না। একটা বিচার প্রক্রিয়া চলমান আছে। বিচারের আগে তো সেই প্রশ্নটিই আসে না। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে সেই আহ্বান রাখব। এ বিষয়েও যাতে আমরা রাজনৈতিক ঐকমত্যে আসতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘এখনো ফ্যাসিবাদী শক্তি তার দোসর সমাজের নানা জায়গায় রয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদী এ সিস্টেম ব্যবস্থা বদলাতে হবে। আগামী বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য আমাদের মধ্যে কমিটমেন্ট প্রয়োজন। আমরা মনে করি, এখন যে পরিবেশ রয়েছে আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য অটুট রাখতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা সামনে স্বাধীন বৈষম্যহীন বাংলাদেশ হবে। সেজন্য জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে এগোতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি নতুন রাজনৈতিক দল। গণঅভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা তরুণরাই এই দল পরিচালনা করছে। আমরা মনে করি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই হয়েছে সেই লড়াইয়ের স্পিরিটটা আমরা ধারণ করব।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বক্তব্য রাখেন।

ইফতারে সিপিবির মোহাম্মদ শাহ আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালী, বাংলাদেশ জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া, নাজমুল হক প্রধান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সারজিস আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, মীর নাসির, আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা অংশ নেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত