সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

তওবা করার শ্রেষ্ঠ সময়

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:০৪ এএম

গুনাহ করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। অনেক সময় মানুষ ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় গুনাহ করে ফেলে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। অস্বাভাবিক হলো গুনাহে অটল থাকা, অনুতপ্ত না হওয়া এবং অনুশোচনায় না পোড়া। প্রবৃত্তির তাড়নায় কখনো কোনো গুনাহের কাজ করে ফেললে করণীয় হলো, সেই গর্হিত কাজের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, নিজের মনকে অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ করা এবং ভবিষ্যতে অনুরূপ কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প করা এটাই হলো তওবা। তাহলে আশা করা যায়, মহান আল্লাহ আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন। কেন না মানুষ তওবার মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। আত্মশুদ্ধি অর্জনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। পাপাচার পরিহার করে উৎসুক হয় পুণ্যের কাজে। এতে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর পবিত্র রমজান মাস এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই তওবার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ এবং আত্মশুদ্ধি অর্জনে রমজানের গুরুত্ব অনেক।

আত্মশুদ্ধির যে চেতনা নিয়ে আমরা পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানিয়েছিলাম, সেই আত্মশুদ্ধির কতটা আমরা অর্জন করতে পেরেছি, রমজানের শেষ পর্বে এসে তা খতিয়ে দেখা দরকার। অতীত হয়ে যাওয়া রমজানের দিনগুলোতে আমরা কতটা নিষ্ঠার সঙ্গে তওবা করতে পেরেছি? আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। এ সময়ের মধ্যে যদি আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে তওবা করতে পারি, তবে মহান আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন এবং রমজানের প্রতিশ্রুত পুরস্কারে আমাদের তিনি ভূষিত করবেন। মহান আল্লাহ মানুষকে পাপ-পুণ্য প্রভৃতি ভালো মন্দের উপকরণ দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। তাই গুনাহ হতেই পারে। তবুও করণীয় হলো যথাসম্ভব পাপ ও গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। এরপরও যদি ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় গুনাহ হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করা আবশ্যক।

মহান আল্লাহ মানুষকে এ জন্যই সৃষ্টি করেছেন যে, মানুষ সৎ ও ন্যায়ভাবে জীবনযাপন করবে আবার শয়তানের ধোঁকায় পড়ে গুনাহও করবে। অতঃপর অনুধাবন করবে যে, সে গুনাহ করে ফেলেছে এবং গুনাহের ওপর অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর নিকট তওবা করবে। আর মহান আল্লাহ গুনাহগার বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি তোমাদের দ্বারা কোনো গুনাহের কাজ না হতো তবে মহান আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করত এবং তওবাও করত।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২৯০৩)

গুনাহগার বান্দা অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর নিকট তওবা ও ক্ষমা প্রর্থনা করলে মহান আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। মহান আল্লাহ হলেন পরম ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় মহান আল্লাহ এই ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে তিনি ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২২২) মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘তিনিই তো স্বীয় বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা, আয়াত ২৫) মহান আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, ‘আর যে তওবা করে, ইমান আনে এবং সৎকর্ম করে, অতঃপর সৎ পথে অটল থাকে, আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল।’ (সুরা তাহা, আয়াত ৮২)

বান্দা যখন গুনাহ করে এবং তওবা না করে গুনাহের ওপর অটল থাকে তখন মহান আল্লাহ বান্দার ওপর অসন্তুষ্ট হোন। আর বান্দা যখন গুনাহের ওপর অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর নিকট তওবা করে তখন মহান আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হোন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হয়, মহান আল্লাহ বান্দার তওবায় তার চেয়েও অনেক বেশি খুশি হোন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৬৩০৯)

যারা অনবরত পাপাচারে লিপ্ত থেকে মহান আল্লাহর স্মরণ হতে একেবারে গাফেল হয়ে যায় তাদেরও রয়েছে তওবা করার সুযোগ। গুনাহ যত বেশিই হোক না কেন, একনিষ্ঠভাবে তওবা করলে মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যারা সারা বছর পাপাচারে লিপ্ত থেকে নিজের জীবনকে কলুষিত করেছে, মহিমান্বিত এই রমজান তাদের তওবার জন্য সুবর্ণ সুযোগ। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার, আয়াত ৫৩)

কেউ যদি কোনো বান্দার হক নষ্ট করে তাহলে কেবল আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ সেই গুনাহ ক্ষমা করবেন না। বরং এ জন্য বান্দার হক আদায় করে দিতে হবে কিংবা তার কাছে থেকে মাফ চেয়ে তাকে সন্তুষ্ট করতে হবে। নয়তো আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তওবা পাপকে মুছে বান্দাকে নিষ্পাপ করে। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ককে গভীর করে। তাই হজরত রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে বেশি বেশি তওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো এবং তার কাছে ক্ষমা চাও। আমি দিনে ১০০ বার তওবা করি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৭০৩৪)

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো গুনাহ ছিল না। তিনি ছিলেন নিষ্পাপ। তবু তিনি তওবা করতেন। এর দ্বারা মূলত উম্মতকে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে শেখাতেন এবং মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। তাই আসুন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়া সাল্লামের বাতলানো নির্দেশনা অনুযায়ী আমরাও বেশি বেশি তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হই। আর রমজান মাস এই কাজের শ্রেষ্ঠ সময়।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

[email protected]

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত