বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৫:৪১ এএম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা ও পরে তাদের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্তকাজ শেষ হয়েছে। ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন হাতে এসেছে বলে গতকাল রবিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আর এর মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম কোনো তদন্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় এসেছে।

চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের আরও জানিয়েছেন, এই প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা শেষে তারা চূড়ান্ত করবেন। এরপর তা ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ আকারে উপস্থাপন করা হবে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিলে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার পর রিকশা ভ্যানে তোলা হয়। এরপর পুলিশের ভ্যানে তুলে আশুলিয়া পুলিশ স্টেশনের পাশে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে লাশগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি অভিযোগ করা হয়। তবে, অভিযোগ দুটি অভিন্ন হওয়ায় মামলা হয় একটি। এ মামলায় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সংসদ সদস্য (সাবেক) সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। সাইফুল ইসলাম এখনো পলাতক। অন্য আসামিদের মধ্যে ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার সাবেক ওসি এ এফ এম সায়েদ, ঢাকা মহানগর (উত্তর) পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক এসআই আব্দুল মালেক এবং একই থানার কনস্টেবল মুকুল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

এই মামলাসহ গণহত্যার অভিযোগে হওয়া আরও কয়েকটি মামলার তদন্তে অগ্রগতির তথ্য গতকাল সাংবাদিকদের জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর তদন্ত রিপোর্ট এসেছে। আমরা অন্তত বলতে পারি যে একটা রিপোর্ট আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এ ছাড়া তিন থেকে চারটি মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করি ঈদের পরপরই আরও তিন-চারটি রিপোর্ট আমাদের হাতে চলে আসবে। রিপোর্টগুলো আমাদের কাছে আসার পর আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করব। এরপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শেষ করার জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক কম সময়ের মধ্যে তদন্ত সংস্থা শেষ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে।’

‘দলের বিচার করতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন’ : জুলাই-আগস্টে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। গতকাল রবিবার ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখার কনফারেন্স কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ততা থাকলে আমাদের আইনে দলের বা সংগঠনের বিচারের সুযোগ আছে। তবে দল হিসেবে কারও বিচার করা হবে কি না, সে বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে যারা কাজ করছি, আমরা মূলত অপরাধ ও অপরাধীদের পেছনে সময় দিচ্ছি এবং তাদের বিচারের মুখোমুখি করছি। কিন্তু রাজনৈতিক দলকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়, সে ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যাপ্ত আছে। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানান তাহলে এটা সম্ভব।’

অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে দুটো পদ্ধতি আছে। আওয়ামী লীগে যারা শীর্ষ নেতৃত্বে আছেন তারা যে অপরাধ সংঘটন করেছেন প্রত্যেকটা অপরাধের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি দল হিসেবেও কিন্তু বিচারের মুখোমুখি করা যায় (আওয়ামী লীগকে)। আমরা কিন্তু এখনো সেদিকে (দল হিসেবে বিচার) যাইনি। যেহেতু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, যে শাখার যে নেতৃত্ব এ অপরাধগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল যাদের ঘটনাস্থলে পাওয়া যাচ্ছে, যারা পরিকল্পনা করেছিল, বাস্তবায়ন করেছিল; তাদের আমরা আসামি করেছি এবং সামনে এটা চলমান থাকবে।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত