মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

পাবনায় লুঙ্গি বিক্রিতে মন্দা হতাশ বিক্রেতারা

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৫ এএম

কদিন বাদেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। রমজানের ঈদে জাকাতের কাপড়ের চাহিদা থাকায় এ সময়ে সাধারণত পাবনার লুঙ্গি তৈরির কারখানা ও বাজারগুলোতে প্রচ- ব্যস্ততা থাকে। কিন্তু এ বছর উল্টোচিত্র। ঈদকে সামনে রেখে যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার তাদের ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে।

তাঁতশিল্প তথা লুঙ্গি বুননে পাবনার ঐতিহ্য পুরনো। জেলার সদর উপজেলার দোগাছি, সাদুল্লাহপুর, রাজাপুরের নতুনপাড়া, আটঘরিয়া উপজেলার চাচকিয়া, লক্ষ্মীপুর, গোপালপুর ও সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বুনন করা হয় হাতে বোনা ও মেশিনে তৈরি লুঙ্গি। আড়াইশ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দাম পর্যন্ত লুঙ্গি তৈরি হয় এখানে। বাজারে বেশি চাহিদা দোগাছির দোতার লুঙ্গির। খুচরা বাজারে এর দাম ৪৫০ টাকার মতো। এরপরই রয়েছে দেশখ্যাত চাচকিয়া লুঙ্গির চাহিদা। গুণগত মানে পাবনার লুঙ্গির সুখ্যাতি বহুদিনের।

ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁত কাপড়ের ক্ষেত্রে পুরো বছরের ব্যবসার সিংহভাগই হয় রমজানে ঈদকে সামনে রেখে। কিন্তু এ বছর ঈদে আশানুরূপ ব্যবসা নেই। ফলে এ বছর ঈদের মৌসুমে তাঁতিদের মুখেও হাসি নেই। পাশাপাশি প্রতি বছর পাবনা থেকে বিপুলসংখ্যক তাঁত কাপড় ভারতীয় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হলেও এ বছর বাইরের ক্রেতাদের দেখা যায়নি।

সরেজমিনে পাবনার লুঙ্গির দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানের সামনে প্লাস্টিক বা কাঠের টুল পেতে বসে রয়েছেন বিক্রয়কর্মীরা। তবে তেমন ক্রেতার সাড়া মিলছে না। দু-চারজন এসেছেন নিজের ব্যবহার ও জাকাতের লুঙ্গি কিনতে। এসব ক্রেতারা নিজে পরার জন্য সর্বোচ্চ দুটি ও জাকাতের জন্য পাঁচ থেকে সাতটির বেশি কিনছেন না। তবে এদের নিয়েই কিছুটা ব্যস্ততা দোকানিদের।

বিক্রেতা ও কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিকের বেতন ও সুতা, রঙের দাম বাড়ায় প্রতি পিস লুঙ্গির দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা হারে বেড়েছে। তবে বেচাকেনায় এটি মূল সমস্যা নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পরিবেশের কারণে বেচাকেনা কম। বড় বড় ঠিকাদার ও রাজনৈতিক নেতারা এ সময় বেশি দান করতেন। কিন্তু তারা অনেকেই পলাতক। তাছাড়া মানুষের চাহিদা বিবেচনায় জাকাতের ধরনও পাল্টেছে। তারা এখন নগদ টাকা জাকাত হিসেবে দান করেন। সবকিছু মিলিয়ে বেচাবিক্রির বেহাল দশা।’ ৩৫ বছরের ব্যবসায় এত খারাপ সময় যায়নি বলেও জানান তিনি।

সরেজমিনে পাবনার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, উৎসবের মৌসুমেও প্রান্তিক তাঁতিদের অনেকেই তাদের কারখানাগুলো চালাতে পারছে না। অনেকে আবার নিজের কারখানাতেই শ্রমিকের কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন। সদর উপজেলার দোগাছি কুলুনিয়া গ্রামের তাঁতি উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, তার কারখানায় পাঁচটি তাঁত থাকলেও ক্রমাগত লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে প্রায় দুই মাস আগেই কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তিনি জানান, ঈদের মৌসুমেও কারখানা চালানোর মতো পুঁজি না থাকায় একজন মহাজন কাপড় তৈরির জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করেছে। তিন ভাই মিলে সেই কাজ করছেন।

কুলুনিয়া গ্রামের তাঁতি আব্দুস সাত্তার বলেন, গত বছর এ সময় এক বান্ডিল সুতা (৮০ কাউন্ট) কিনতে তাঁতিদের গুনতে হয়েছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। গত আগস্টের পর থেকেই সুতার দাম বৃদ্ধি শুরু করে। ঈদের মৌসুমের উৎপাদন শুরু হওয়ার আগে আবারও দাম বেড়েছে সুতার। এখন এক বান্ডিল সুতা কিনতে তাঁতিদের গুনতে হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কিন্তু বাজারে কাপড়ের দাম সে হারে বাড়েনি। ফলে তাঁতিদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

আরাফ লুঙ্গি ঘরের স্বত্বাধিকারী আহসানুল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘এখনকার নতুন প্রজন্মের লোকজন লুঙ্গি পরে না। তারা ট্রাউজার কিংবা হাফপ্যান্ট পরে। ব্যবসায় যে মন্দা যাচ্ছে তাতে এটি কতদিন ধরে রাখতে পারব তাই নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত