ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে আগ্রাসন শুরু করেছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করেছিল তেল আবিব। এরপর চলতি বছর জানুয়ারির শেষ দিকে মিসর-কাতার-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল হামাস ও ইসরায়েল। আর এই সময়ের মধ্যে অঞ্চলটিতে ১৭ হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আর ইসরায়েলি সেনাদের নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে অনাথ হয়েছে ৩৯ হাজারের বেশি শিশু।
ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর।
দুই মাসের বেশি সময় উপত্যকাটিতে হামলা বন্ধ থাকলেও নতুন করে ইসরায়েলের হামলা শুরু হওয়ায় আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে গাজাবাসীর ভবিষ্যৎ। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে গাজার শিশুরা। সম্প্রতি জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন অন্তত ১০০ শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে। প্রতিবছর ৫ এপ্রিল ফিলিস্তিনি শিশু দিবস পালিত হয়। এই দিবস উপলক্ষে এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের সরাসরি আক্রমণের শিকার হচ্ছে গাজার শিক্ষাব্যবস্থা। তারা ক্রমাগত স্কুল ধ্বংস করছে এবং শিশুদের নিরাপদ শিক্ষামূলক পরিবেশে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয় গাজা, জেরুজালেম এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরের ‘এরিয়া সি’ হিসেবে চিহ্নিত এলাকার শিক্ষার্থীরা চলমান যুদ্ধের কারণে প্রতিদিন নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজায় ১৭ হাজারের বেশি শিশু শহীদ হয়েছে। এই সংখ্যা শিশুদের ভোগান্তির গভীরতা তুলে ধরে, যেখানে প্রতিটি সংখ্যা একটি জীবন, স্মৃতি এবং হারানো অভিজ্ঞতার প্রতিনিধিত্ব করে।
গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলার পর থেকে ফিলিস্তিনি শিশুরা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। যুদ্ধের ভয়াবহতায় গাজার শিশুদের মানসিক যন্ত্রণাও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধের ফলে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ হাজার ৬০৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩ জন আহত হয়েছে। সরকারি মিডিয়া অফিস মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০-এর বেশি বলে জানিয়েছে। এই হিসাবে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা হাজার হাজার নিখোঁজকে মৃত ধরে নেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিন কর্র্তৃপক্ষ বলছে, হতাহতের ৬০ শতাংশের বেশি নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সিরা ফিলিস্তিনের জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ, যার মধ্যে পশ্চিম তীরে ৩৪ লাখ এবং গাজায় ২১ লাখ শিশু রয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজা আধুনিক ইতিহাসের বৃহত্তম অনাথ সংকটের সম্মুখীন। ফিলিস্তিনি শিশু দিবস উপলক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলার ৫৩৪ দিনে গাজায় ৩৯ হাজার ৩৮৪ শিশু তাদের এক বা উভয় অভিভাবককে হারিয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার শিশু তাদের উভয় অভিভাবককে হারিয়েছে, যারা এখন কোনো ধরনের সমর্থন বা পরিচর্যা ছাড়াই জীবনযাপন করছে। ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে, যা এই উপত্যকাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করছে।
দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। এরপর প্রায় দুই মাস ভূখণ্ডটিতে খুব একটা হামলা হয়নি। তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাড়ানোর বিষয়ে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজায় নতুন করে হামলা জোরদারের পর প্রায় দেড় হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। সেই সঙ্গে রয়েছে কঠোর অবরোধ। খাদ্য, পানি, ওষুধসহ সব ধরনের জরুরি পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় গাজার বাসিন্দারা ভয়াবহ মানবিক সংকটের সম্মুখীন। মানবিক সংকটের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও কার্যত ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলো উপচে পড়ছে আহতদের ভিড়ে। চিকিৎসা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই বলে অনেক রোগীকেই সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।