কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ফরিদা বেগম (২৪) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নিহত ফরিদার ভাসুর মোস্তফা ও আফজাল। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নিহত ফরিদা বেগম উপজেলার আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের কালাচর গ্রামের দুবাইপ্রবাসী সারোয়ার আলমের স্ত্রী। পার্শ্ববর্তী জোড্ডা পূর্ব ইউনিয়নের পানকরা গ্রামের হেদায়েত উল্লাহর মেয়ে তিনি। ফরিদার ফয়সাল (৭) ও সাইফা (৪) দুই সন্তান রয়েছে।
এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক বলেন, নিহতের ছোট ভাই মুনসুর আলম বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। তার মধ্যে দুজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদের গ্রেপ্তার চেষ্টা চলছে।
ওসি আরও জানান, ফরিদার মরদেহ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন সম্পত্তি নিয়ে প্রবাসী সারোয়ার আলমের সঙ্গে তার ভাইদের বিরোধ চলে আসছিল। প্রবাসীর স্ত্রী ফরিদাকে মারধর ও বিভিন্ন হুমকি দুমকি দেন সারোয়ার আলমের ভাইয়েরা। এ নিয়ে থানায় একাধিক অভিযোগও করা হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ভোরে নিহত ফরিদা বেগমের ভাসুর মোস্তফা, আফজাল, দেবর মোশারফ হোসেন ও শাশুড়ি জমিলা বেগম তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে গুরুতর আহত করেন। পরে তারা ফরিদাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে নিয়ে গেলে ওখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। তারা ফরিদাকে দ্রুত বাড়িতে নিয়ে এসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অপপ্রচার চাল। এই ঘটনার পরপরই ভাসুর, দেবর ও শাশুড়ি পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান।
নিহতের মা শহিদা বেগম বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফরিদা ফোন দিয়ে বলে 'মা, আমাকে নিয়ে যান, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।' আমি তাকে শান্ত করি। কিন্তু ১০টার দিকে খবর আসে, ফরিদা আত্মহত্যা করেছে। পরে জানতে পারি মোস্তফা, মোশারফ ও জমিলা মিলে ফরিদাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর তারা বলে ফরিদা আত্মহত্যা করেছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।
ফরিদার সাত বছরের ছেলে ফয়সাল বলেন, সকালে দাদু, জেঠা আর চাচা মিলে মাকে মারধর করে। পরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার বাসায় এনে দেখি, মা আর কথা বলছে না।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।