মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ঘরের মাঠে বিদায় রিয়াল, পরের মাঠে বায়ার্ন

আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৬ এএম

রেকর্ড ১৫ বারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন তারা, খাদের কিনারা থেকে বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর অনন্য সব ইতিহাস আছে। কিন্তু সময় যখন খারাপ যায়, তখন কোনোকিছুই ঠিকঠাক হয় না। তাই নিজেদের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটা করতে পারল না রিয়াল মাদ্রিদ। বিবর্ণ ফুটবলে গ্যালারি স্তব্ধ করে আর্সেনালের কাছে হেরে গেল ২-১ ব্যবধানে। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধানের অগ্রগামিতায় চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে মিকেল আর্তেতার দল। আগামী ২৯ এপ্রিল সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ঘরের মাঠে আর্সেনালের প্রতিপক্ষ ফরাসি ক্লাব পিএসজি। পরের দিন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইন্তার মিলানকে আতিথেয়তা দেবে বার্সেলোনা।

বুধবার রাতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচ শুরু হতেই দ্বিতীয় মিনিটে ভিনিসিয়ুসের ক্রসে জালে বল পাঠান এমবাপ্পে, যদিও অফসাইডের কারণে গোল বাতিল হয়। দশম মিনিটে একবার পেনাল্টি পেলেও দুর্বল শটে গোল করতে পারেননি ইংলিশ ফরোয়ার্ড বুকায়ো সাকা। ২৩তম মিনিটে আরেকটি পেনাল্টি ঘিরে শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। ডেকলান রাইসের বাধায় কিলিয়ান এমবাপ্পে বক্সে পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। রাইসকে দেখান হলুদ কার্ড। তবে আর্সেনালের এই মিডফিল্ডার ও তার সতীর্থরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালে সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেকটা বেশি সময় নিয়ে ভিএআর পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষা শেষে রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।

ম্যাচ শেষে এটাকেই হারের বড় কারণ বলেছেন রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি। কিন্তু তার শিষ্যরাও যে নিজেদের ছায়া হয়ে ছিলেন। প্রথমার্ধে শুধু একের পর এক আক্রমণ দেখা গেছে, কিন্তু গোল হয়নি। ৬১তম মিনিটে রদ্রিগো, ডেভিড আলাবা ও লুকাস ভাসকেসকে তুলে দানি সেবাইয়োস, ফ্রান গার্সিয়া ও এনদ্রিককে নামান রিয়াল কোচ। এতে চাঙ্গা হওয়ার বদলে উল্টো ৬৫ মিনিটে গোল হজম করে বসে স্বাগতিকরা। মিকেল মেরিনোর দারুণ এক থ্রু পাস থেকে বক্সে বল পেয়ে স্কোরলাইন ১-০ করেন পেনাল্টি মিস করা সাকা। একটু পরেই অবশ্য গোলটি পরিশোধ করেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। কিন্তু ওই পর্যন্তই। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে মেরিনোর থ্রু বল ধরে জয়সূচক গোলটি করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্তিনেল্লি। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই রিয়ালের বিদায়ঘণ্টাও বেজে যায়।

২০০৯ সালের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠল আর্সেনাল। এদিকে এই হারের পর রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তির চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে। অবশ্য ম্যাচ শেষে তিনি আর্তেতাকে শুভকামনা জানিয়েছেন। ২০১৯ সালে আর্সেনালের দায়িত্ব নেওয়া আর্তেতা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এটা আমার ফুটবল ক্যারিয়ারের সেরা রাতগুলোর একটি। এমন একটি দলের বিপক্ষে আমরা খেলেছি, যারা ইতিহাসের সেরা।’ অন্যদিকে আনচেলত্তি জানিয়েছেন, তিনি ছাঁটাই হওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। ৬৫ বছর বয়সী এই কোচের ভাষায়, ‘কোচ বদলের সিদ্ধান্ত ক্লাব নিতে পারে, হতে পারে এই বছর অথবা পরের বছর, যখন আমার চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে, তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি যখন এখান থেকে বিদায় নেব, তখন ক্লাবকে শুধু ধন্যবাদই দিয়ে যাব।’

আর্সেনালকে কৃতিত্ব দিয়ে আনচেলত্তি বলেন, ‘দুই ম্যাচেই আর্সেনাল আমাদের চেয়ে ভালো ছিল, এটা মেনে নিতেই হবে। সেমিফাইনালে খেলা তাদের প্রাপ্য ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি। আমাদের জয়ের তাড়না ছিল, তবে সেটা যথেষ্ট হয়নি। এই ব্যর্থতাই আরও ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা দেবে।’

সান সিরোর উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে ইন্তার মিলান। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইতালিয়ান জায়ান্টরা। এই জয়ের মাধ্যমে এখনো তিনটি শিরোপার দৌড়ে আছে সিমোনে ইনজাগির শিষ্যরা চ্যাম্পিয়নস লিগ, সিরি আ এবং কোপা ইতালিয়া। ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনাও জিইয়ে রেখেছে ক্লাবটি।

গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর বায়ার্নকে ৫২ মিনিটে এগিয়ে দেন হ্যারি কেইন। গোলের রেশ না কাটতেই ৯ মিনিটের মধ্যে বায়ার্নের জালে দুই গোল দিয়ে বসেন স্বাগতিকরা। ৭৬ মিনিটে ম্যাচে সমতা ফেরায় বায়ার্ন। ইন্তারের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করা বেঞ্জামিন পাভার্ড ট্রেবল জয়ের আশায় বুক বেঁধেছেন, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগে এটাই আমার প্রথম গোল, তবে সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দ তার থেকেও বেশি। আমরা প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছি, জানতাম রক্ষণই হবে মূল চাবিকাঠি। একজন ডিফেন্ডার যখন গোল করেন, তখন তা আরও বিশেষ হয়ে ওঠে। আমরা কোনো সীমা টেনে দিই না, এত দূর এসে এখন শুধু এগিয়ে যেতে চাই।’ আর প্রথম গোলটি আসে আর্জেন্টাইন তারকা লাউতারো মার্তিনেজের পা থেকে। তিনি বলেন, ‘এই ম্যাচটা আমরা অনেক দিন মনে রাখব। ইন্তার কখনো হাল ছাড়ে না আমাদের মানসিকতা, হৃদয়, এবং মস্তিষ্ক তিনটিই আছে। আমরা কষ্ট করেছি, কিন্তু আবারও প্রমাণ করেছি যে বড় কিছু করতে পারি।’

২০১০ সালে হোসে মরিনহোর অধীনে ইন্তার মিলান শেষবার ট্রেবল জিতেছিল বায়ার্নকে হারিয়েই জিতেছিল সেই সময়ের চ্যাম্পিয়নস লিগ। এবারও বায়ার্নকে হারিয়ে এগোলো তারা। এবার ইনজাগির হাত ধরে তাই আবার ইতিহাস রচনার পথে রয়েছে ক্লাবটি। আর বায়ার্নের জার্সিতে নিজের শেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচটি খেলে ফেললেন টমাস মুলার।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত