মেঘলা আকাশ, কখনো রোদের ঝলকানি, কখনো আবার ঘনিয়ে আসা ধোঁয়াটে অন্ধকার। হঠাৎই মনে হয়, নামবে বুঝি এক পশলা বৃষ্টি। এমন আবহে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম যেন হয়ে উঠেছে এক মোহময়ী ক্যানভাস। যেখানে শুধু ক্রিকেট নয়, প্রকৃতির এমন নয়নাভিরাম সৌন্দর্যেও হারিয়ে যেতে হয়। ড্রেসিং রুমের কাচঘেরা জানালা দিয়ে বাইরের মন মাতানো সবুজে চোখ রাখলে মনেও হয় না বৃষ্টি বিরক্তিকর কিছু! সকালের বৃষ্টিতে এমনটা ভাবতেই পারে শন উইলিয়ামসরা। এমন এক রোমান্টিক আবহেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বাংলাদেশ দল। ২০ এপ্রিল থেকে সিলেটে শুরু হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। দীর্ঘ ছয় মাস পর আবারও সাদা পোশাকে মাঠে নামবে টাইগাররা। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রস্তুতিটা একটু বাড়তি মনোযোগে হচ্ছে।
১২ এপ্রিল থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার গ্রাউন্ডে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি ক্যাম্প। এক দিন বিরতির পর বুধবার আবারও মাঠে নেমেছেন শান্ত-মুমিনুলরা। ব্যাটিং ও বোলিংয়ের সূক্ষ্ম দিকগুলো নিয়ে হয়েছে ঘষামাজা। ব্যাটসম্যানদের টেকনিক্যাল দিকে আলাদা করে নজর দিতে দেখা যায় সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে। মাহিদুল ইসলাম অংকন, জাকের আলী অনিকদের নিয়ে সময় কাটাতে দেখা গেছে তাকে। নেট বোলারদের বলেও দুই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান করেছেন ম্যাচ উপযোগী অনুশীলন। পেস বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামসের বোলিং অনুশীলন নজরে রেখেছিলেন খালেদ আহমদ, হাসান মাহমুদ, তানজিম সাকিব আর নাহিদ রানাদের। মিরাজ-তাইজুলদের ঘূর্ণির পাঠে ছিলেন সোহেল ইসলাম। সবটাই মাঝমাঠে দাঁড়িয়ে থেকে তীক্ষè দৃষ্টিতে নজরে ছিল প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের।
প্রায় দেড় ঘণ্টা ব্যাটিং অনুশীলন শেষে জাকের অনুশীলনের অন্যপ্রান্তে ছুটে যান ফিল্ডিং কোচ জেমস প্যামেন্টের কাছে। এ সময় নাহিদ রানাকে ক্যাচ প্র্যাকটিস করাচ্ছিলেন তিনি ক্যাচের আগে-পরে হাতের অবস্থান, দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা সব কিছুর মন্ত্র বাতলে দিচ্ছিলেন তরুণ এই পেসারকে। পরে জাকেরের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটান উইকেটকিপিংয়ের সূক্ষ্ম দিকগুলো নিয়ে। জাকেরের পর গ্লাভস হাতে কিপিং অনুশীলনে নামেন অংকনও। তাকে বড় শটের ক্যাচ নিতে দৌড়াতে দেখা গেছে বারবার। সাফল্য-ব্যর্থতার মিশেলে শেষ হয় তার সেশন। অনুশীলনের ধরন দেখে অনুমান করা যাচ্ছে, সিলেট টেস্টে উইকেটের পেছনে দায়িত্ব থাকতে পারে স্থানীয় ক্রিকেটার অনিকের কাঁধেই। বোলিং অনুশীলন শেষ করে মিরাজ, তাইজুল, খালেদ, নাহিদ, হাসান মাহমুদরাও ব্যাট হাতে নামেন। এমনকি ব্যাট-প্যাড খুলে মুমিনুল হককেও দেখা যায় বোলিং করতে। এভাবে যখন সিলেটের মেঘলা দিনের অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছিলেন ক্রিকেটাররা, তখন অধিনায়ক শান্তকে নিয়ে ১ নম্বর গ্রাউন্ডে যান প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। যেখানে স্থানীয় গ্রাউন্ডসম্যানদের সঙ্গে ঢাকা থেকে উড়ে আসা প্রধান কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা তাদের অপেক্ষায় ছিলেন। প্রথমে সেন্টার উইকেট প্রদক্ষিণ শেষে দুই নম্বর উইকেট ঘুরে দেখেন তারা। মাঠ পরিচর্যায় গ্রাউন্ডসম্যানদের ব্যস্ততা দেখে অনুমান করা যাচ্ছে, মূল লড়াই হতে যাচ্ছে সেন্টার উইকেটেই।
এভাবেই অনুশীলনের তিন ঘণ্টা সময় কেটে যায় বাংলাদেশের। তবে স্বাগতিকরা বিকেলের পুরোটা সময় অনুশীলনের জন্য পেলেও সফরকারী জিম্বাবুয়ে ৫০ মিনিটের বেশি পারেনি। সকাল সাড়ে ৯টায় অনুশীলন শুরুর কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে সেটি পিছিয়েছে দেড় ঘণ্টা। এক ফাঁকে রোদের দেখা মিলতেই তারা নেমে পড়ে মাঠে রানিং, ব্যাটিং-বোলিং, ফিল্ডিং সবই চলছিল নিজস্ব গতিতে। কিন্তু মিনিট ৫০ যেতেই নামে বৃষ্টি। তড়িঘড়ি করে মাঠ ছাড়লে ১১টা ৫২ মিনিটে বন্ধ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের অনুশীলন, যা আর শুরুই করা যায়নি। প্রথম দিনের প্রস্তুতিতে তাই এগিয়ে স্বাগতিকরা। এখন অপেক্ষা ২০ এপ্রিলের। সাদা পোশাকে মাঠে ফিরবে বাংলাদেশ। নতুন কৌশল, নতুন চ্যালেঞ্জ সিলেটের এই নয়নাভিরাম মাঠে শুরু হবে আরেকটি নতুন পথচলা।