মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

সৌন্দর্যচর্চায় আধুনিক চিকিৎসা

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৪ এএম

সৌন্দর্য শুধু রূপচর্চার সীমারেখায় সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা ব্যাপ্ত হয়েছে চিকিৎসাক্ষেত্রে। সৌন্দর্যচর্চায় জনপ্রিয় ট্রেন্ড বোটক্স, ফিলার এবং হেয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি। ঠোঁট, চিবুক থেকে ত্বক টোনড কিংবা কাক্সিক্ষত অবয়ব হতে পারে কসমেটোলজির সার্জারির মাধ্যমে। তবে হেয়ার ইমপ্ল্যান্টের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অস্বাস্থ্যকর খাবার, অপর্যাপ্ত ঘুম ও সেডেন্টারি জীবনযাপন, বয়স এসব কারণে ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। আর এ কারণে বোটক্স ও ফিলার এবং হেয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারির চাহিদা বাড়ছে । বিস্তারিত জানালেন ত্বক ও চুল বিশেষজ্ঞ ডা. আসমীয়া হাসিন

ত্বকের জন্য বোটক্স ও ফিলার

ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে বোটক্স ও ফিলার দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে। তারকাদের পাশাপাশি ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে সাধারণরাও  বোটক্স ও ফিলারে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে বোটক্স ও ফিলার কতটা নিরাপদ, কীভাবে প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হয়, কী উপকার পাওয়া যায় ও স্থায়িত্ব কতদিন এ নিয়ে অনেকেরই নানা প্রশ্ন আছে।

বোটক্স : বোটক্স হচ্ছে পিইরিফাইড প্রোটিন, যা ব্যাকটেরিয়া থেকে আসে। মুখের নির্দিষ্ট মাংসপেশি নির্দিষ্ট এক্সপ্রেশনের জন্য ব্যবহার হয়। ওই মাংসপেশিকে শিথিল করে দেওয়া হয় বোটক্সের মাধ্যমে। যাদের কপালে ও চোখের পাশে বলিরেখা, মুখ অনেক বড় বা চওড়া থাকে তাদের মুখ চাপা করতে, গলার বলিরেখা ঠিক করার জন্য যে উপকরণ ব্যবহার করা হয় সেটি বোটক্স। যে মাংসপেশিতে এক্সপ্রেশনের জন্য বলিরেখা হচ্ছে, ওই মাংসপেশি শিথিল করে দেওয়া হয় বোটক্সের মাধ্যমে।

ফিলার : ফিলার হচ্ছে একটা সুগার ম্যাটেরিয়াল। যা হায়ালুরোনিক অ্যাসিড দিয়ে তৈরি হয়। বিভিন্ন ধরনের ফিলার ম্যাটেরিয়াল আছে। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয় এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। যার কারণে মুখম-লের বিভিন্ন জায়গায় ভলিউম কমে যায়। ফলে চোখের নিচে গর্ত হতে থাকে, গালের ভলিউম কমে যায়, নাকের দুই পাশে থাকা স্মাইল লাইন অনেক গভীর হয়ে যায়। এ রকম পুরো মুখম-লেই অনেক ধরনের ভলিউম কমে যায় ও গর্ত হয়। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ফিলার দিয়ে ঠিক করা যায়। যারা নাক শার্প করতে, মুখাকৃতি ভি শেপ করতে, চোয়ালের রেখা ঠিক করতে কিংবা ঠোঁট পাউট করতে চান। তারা ফিলারের মাধ্যমে করতে পারেন।

কীভাবে করা হয়

ত্বকে ব্যবহারের জন্য প্রথমে বোটক্স পাউডার ডায়ালুট করা হয় পর্যাপ্ত পরিমাণ নরমাল স্যালাইন ব্যবহার করে। যিনি বোটক্স করবেন পরীক্ষা করে দেখা হয় তার কতটুকু ও কোথায় লাগবে। ত্বকের যে জায়গায় বোটক্স করা হবে সে জায়গাটি ক্রিম ব্যবহার করে অবশ করে নেওয়া হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে বোটক্স করা হয়। কোনো ব্যথা অনুভূত হয় না। ফিলার করার সময়ও ত্বকের নির্ধারিত স্থানটি অবশ করে নেওয়া হয়। মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে ইনজেক্ট করা হয়। ফিলারের উপাদান সিলড সিরিঞ্জের মধ্যে থাকে। একটা সিরিঞ্জে ১ এমএল করে থাকে, যা ত্বকে ব্যবহার করা হয়। শরীরে যেটা ব্যবহার করা হয় তাতে ১০ এমএল থাকে।

ত্বকের জন্য নিরাপদ কতটুকু

বোটক্স ও ফিলার করার জন্য যে উপাদান ব্যবহার করা হয় তা ত্বকের জন্য নিরাপদ। তবে অভিজ্ঞও প্রশিক্ষিত ডাক্তারের কাছে করাই ভালো। কারণ যে মাংসপেশি শিথিল করার জন্য বোটক্স করতে হচ্ছে সেই মাংসপেশি কোথায় শুরু হচ্ছে, কোথায় শেষ হচ্ছে, কোন জায়গাটাতে আছে সেটা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভালো জানবেন। এ ছাড়া ফিলার ত্বকের কোন স্তরে দিতে হবে সেটি ঠিক করাও গুরুত্বপূর্ণ। কখনো ত্বকের নিচে, কখনো ফ্যাটের মধ্যে, হাড়ের ওপর, মাংসপেশির নিচে বিভিন্ন জায়গায় বসানোর ব্যাপার থাকে। পাশাপাশি, কোন উপাদান ব্যবহার করে কাজ করা তাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

২০ বছর বয়সের পর থেকে বোটক্স ও ফিলার করা যায়। ভালো মানের প্রোডাক্ট দিয়ে ফিলার করলে দেড় থেকে দুই বছর স্থায়ী হয়। পরে রিটাচ বা নতুন করেও করতে পারেন। ফিলার বিভিন্ন টাইপের হয়। ত্বকের একেক জায়গায় একেক ধরনের ফিলার ব্যবহার করা হয়। থিন ফিলার এক থেকে দেড় বছর স্থায়ী হয়। আর থিক ফিলার দেড় থেকে দুই বছর স্থায়ী হয়। খুব ভালো মানের বোটক্স ৫ থেকে ৬ মাস স্থায়ী হয়। আর মধ্যম মানের বোটক্স ৪ মাস স্থায়ী হয়। তারপর আবার নতুন করে করতে হবে। বোটক্স ও ফিলার একবার করে পরে করা বন্ধ করে দিলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এ ধরনের আশঙ্কা ভুল।

হেয়ার ইমপ্ল্যান্ট কখন করবেন

হেয়ার ইমপ্ল্যান্টেশন মেডিকেল প্রক্রিয়া। এটা করতে আঠারো বছর বয়স হতে হবে। কারণ এর সঙ্গে একাধিক অর্গ্যান ও হরমোনাল প্রক্রিয়া রয়েছে।  হেয়ার ইমপ্ল্যান্টেশনের সাতটি ধাপ রয়েছে। গ্রেড এক (চুল পড়ার জন্য যখন হেয়ার লাইন কপালের ওপরের দিকে উঠে আসে) ও গ্রেড দুই-তে (মাথার দুপাশে চুলের ঘনত্ব হাল্কা হওয়া)। তৃতীয় পর্যায়েও একই অবস্থা বজায় থাকে। ব্যক্তির হেয়ার ফল স্বাভাবিকভাবে কমে না আসা পর্যন্ত হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রক্রিয়া শুরু করা যায় না। হেয়ার ফল হতে হতে স্ক্যাল্পের যে অংশে ফলিকল সম্পূর্ণভাবে উঠে গিয়েছে বা রিজেনারেটিভ ট্রিটমেন্টেও তার প্রতিকার সম্ভব নয় একমাত্র সেই অবস্থায় হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্টের কথা ভাবা হয়। সার্জারির আগে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। ব্যক্তির রক্তে ভিটামিন বি-১২ ও আয়রনের হার, ত্বকের রোগ, থাইরয়েড বা কোনো হরমোনাল সমস্যা আছে কি না। এসব সমস্যা না থাকার পরও যদি মাথায় টাক হয় তাহলে চিকিৎসক হেয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারির পরামর্শ দেন। মনে রাখবেন স্ক্যাল্পের যে স্থানে হেয়ার ফল বেশি এবং প্রায় স্থায়ী টাক তৈরি হয়ে গিয়েছে, সার্জারির মাধ্যমে শুধু সেই অংশের চুল প্রতিস্থাপিত হয়।

হেয়ার ইমপ্ল্যান্ট কীভাবে হয়?

সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হেয়ার ইমপ্ল্যান্টেশন করা হয়। এ ক্ষেত্রে দুটো পদ্ধতি রয়েছে।

এফইউই বা ফলিকিউলার ইউনিট এক্সট্র্যাকশন :  এই পদ্ধতিতে সরাসরি সার্জারি ছাড়াই হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়। স্ক্যাল্পের ‘সুস্থ’ টিসু ও ফলিকল কম ঘনত্ব যুক্ত অংশে লাগানো হয়।

হেয়ার হারভেস্টিং : স্ক্যাল্পের পেছন দিক থেকে স্কিনের স্ট্রিপ তুলে স্ক্যাল্পের প্রয়োজনীয় অংশে প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রতিস্থাপিত এই অংশের হেয়ার রুট পূর্ববর্তী হেয়ার রুট প্যাটার্নের সঙ্গে সমানভাবে যুক্ত থাকে। সার্জারি সফল হলে স্ক্যাল্পের ওই অংশে স্বাভাবিক নিয়মে চুল গজাবে এবং পরিচর্যা পদ্ধতিও স্বাভাবিক চুলের মতো।

সার্জারির পরে : সার্জারির পর প্রথম কিছু দিন ব্যথা অনুভূত হতে পারে। চিকিৎসক পেইনকিলার ও ভিটামিন দিতে পারেন। সার্জারির দুদিন পর থেকে বেবি শ্যাম্পু করা যাবে। হেয়ার ভিটামিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে হেয়ার জেল বা মেডিকেটেড অয়েল ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর বছরে চার থেকে পাঁচবার পিআরপি ও জিএফসি থেরাপি দেওয়া হয়। পোস্ট সার্জারির পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ হলো ডায়েট। খাদ্যতালিকায় মৌসুমি শাকসবজি, প্রোটিন, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যেমন ফ্ল্যাক্স সিড, সেসমি সিড, চিয়া সিড, মেলন সিড, আমন্ড ইত্যাদি থাকা দরকার। এর ফলে স্বাভাবিক চুলের বৃদ্ধি ঠিক থাকে।

সতর্কতা : বোটক্স ও ফিলার করার পর ২৪ ঘণ্টা মুখে পানি লাগানো যাবে না। মুখে চাপ দেওয়া যাবে না। জিম, সুইমিং ৭ দিন বন্ধ থাকবে। পর্যাপ্ত ঘুম, পানি পান, খাওয়া-দাওয়া ঠিক রাখতে হবে। তাহলে অনেক দিন স্থায়ী হয়। বোটক্সে অনেকের অ্যালার্জি থাকে। তাই বোটেক্সের আগে অ্যালার্জি আছে কি না দেখে নিতে হবে। ফিলারে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয় না।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত