নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে প্রায় অর্শত শত কোটি টাকার গ্যাস আমদানি করেছে বিভিন্ন কোম্পানি। এসব গ্যাস এসি ও ফ্রিজের ব্যবহার করা হয়। যে কারণে বিস্ফোরক পরিদপ্তর ও পরিবেশ অধিপ্তর কর্তৃক যাচাই বাছাইকৃত না হলে বড় রকমের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে রিফ্রিজারেন্ট আমদানিকারক ও জড়িত সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচলক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব তরফদার সোহেল রহমান।
তিনি বাংলাদেশ রিফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ব্রামার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রবিবার এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগের কপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, কাস্টমস গোয়েন্দা’র মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১২ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ২০২৫ সালের এইচএফসি কোটার অনুকূলে রিফ্রিজারেন্ট আমদানি লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স লাইসেন্স অনুমোদনের আগেই রিফ্রিজারেন্ট আমদানি করে বন্দর হতে পণ্য খালাস করে। একইভাবে আমদানি করা রিফ্রিজারেন্ট কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্তৃক রিফ্রিজারেন্ট পণ্য খালাসের ডকুমেন্টের সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর ইস্যুকৃত প্রতিটি রিফ্রিজারেন্ট আমদানি লাইসেন্সের কপি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই লাইসেন্সে রিফ্রিজারেন্টের ধরণ, অনুমোদনকৃত পরিমাণ, আমদানির মেয়াদকাল উল্লেখ থাকে। যেখানে লাইসেন্সের অনুমোদনকরা হয়নি সেখানে এক্সামিনারসহ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কোনও পদ্ধতি অনুসরণে ১০০ ভাগ এক্সামিনের মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি করা হয়েছে? বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এনবিআর’র ডাটা শিট তথ্যানুসারে, গ্যাস আমদানির জন্য ৪৩০টি আবেদনের মধ্যে যাচাই বাছাই শেষে গত ১২ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তর ৩০৮টি প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস আমদানির লাইসেন্স প্রদান করে। এর মধ্যে অবৈধভাবে পরিমাণের অনেকগুণ বেশি গ্যাস আমদানি করে কিছু কোম্পানি। অনুমোদন ছাড়াই রাফি এন্টারপ্রাইজের মালামাল ‘শতভাগ পরীক্ষণ পূর্বক’ রিলিজ করেন সহকারী রাজম্ব কর্মকর্তা সাইফুল করিম। এতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কোনও অনুমোদন নেই। যা পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, একটি প্রতিষ্ঠানকে আর-৪০সি গ্যাস ১২৪৪.২০ কেজির অনুমোদন দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু ওই কোম্পানি অবৈধভাবে আমদানি করেছে ৬৭৯৮ কেজি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ডাটা বিশ্লেষণে জানা গেছে, ২৩০.২০ টন গ্যাস রিলিজের জন্য অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে এই প্রতিবেদকের হাতে তথ্য রয়েছে, চারটি কোম্পানির ৪৬.৮০ টন গ্যাস কাস্টমস থেকে রিলিজ করে তাদের গোডাউনে সংরক্ষণ করেছে।
এক্ষেত্রে বেশিরভাগ মাল কাস্টমস থেকে অবৈধভাবে রিলিজের ক্ষেত্রে সিএন্ডএফ এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে চট্টগ্রামের মুজিব রোডের ১৫১ সুলতান সুপার মার্কেটের তাজ এজেন্সিজ। তবে এ বিষয়ে চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অবৈধভাবে অর্ধশত কোটি টাকার গ্যাস আমদানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে রাফি এন্টারপ্রাইজ, সুপ্রিম এয়ারকন্ডিশনিং কোম্পানি, মাসুম ট্রেডার্স, বিজয় ট্রেডার্স, বিসমিল্লাহ রিফ্রিজারেশন, মেসার্সস তালুকদার ট্রেড সেন্টার, ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্টিজ, আজিজ ট্রেড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, মেসার্স নাবিল ট্রেড কর্পোরেশনসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান।