মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

জাকসু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪১ এএম

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা আলোচনা, দাবি ও কর্মসূচির পর গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনী রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রোডম্যাপ অনুযায়ী গত ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলোর জাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার নিয়ে মতবিরোধের কারণে কর্র্তৃপক্ষ তফসিল ঘোষণা করতে পারেনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ জানায়, আগামী মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নির্বাচন হবে। তফসিল ঘোষণা হবে নির্বাচনের ২১ দিন আগে। আর ১০ এপ্রিলের মধ্যে জানানো হবে তফসিল ঘোষণার তারিখ। কিন্তু এখনো পর্যন্ত জাকসুর তফসিল ঘোষণার নির্ধারিত তারিখ ঘোষণা করতে পারেনি প্রশাসন। ফলে পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে তফসিল ঘোষণাসহ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জাকসু নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে বেশকিছু কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। জাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার পর গত ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সভাপতি এবং প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলমকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন করা হয়। এ ছাড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, পরিবেশ পরিষদ গঠন, হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্র সংস্কারের প্রস্তাব তৈরি এবং এসব প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কাছে লিখিত চিঠি দিয়ে তাদের মতামত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ।

গত বছর আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), আধিপত্যবাদবিরোধী মঞ্চ, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন দাবি করেছিল। অন্যদিকে ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), ছাত্রফ্রন্ট কিছু বিষয় সংস্কার করে তারপর নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল। ছাত্রসংগঠনগুলোর মতবিরোধের ফলে রোডম্যাপের নির্ধারিত সময়ে তফসিল ঘোষণা করতে পারেনি প্রশাসন।

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, জাকসু রোডম্যাপ ঘোষণার পর একটি সংগঠনের বিরোধিতার কারণে নির্ধারিত সময়ে তফসিল ঘোষণা করতে পারেনি প্রশাসন। আমরা শক্তভাবেই বলতে চাই, আর কোনো অজুহাতে জাকসু নির্বাচন পিছিয়ে যাক, সেটা চাই না।

জাকসু গঠনতন্ত্র সংস্কারের সব জট খুলে দ্রুত নির্বাচন চান গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ৩২ বছরের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান রেখেই আমরা এ নির্বাচন সম্পন্ন দেখতে চাই।

তবে এখনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রাণের দাবি জাকসু নির্বাচন, কিন্তু প্রশাসন এখনো জুলাই-আগস্টে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ এবং হামলার মদদদাতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের আওতায় আনেনি। ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আসীন রয়েছে। এ অবস্থায় আমরা মনে করি, সবার অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাকসুর চূড়ান্ত গঠনতন্ত্র এখনো আমি হাতে পাইনি । কবে নাগাদ হাতে পাব সে ব্যাপারে প্রশাসন থেকে কোনো নির্দিষ্ট সময় আমাকে জানানো হয়নি। নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। গঠনতন্ত্র ছাড়া আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না। গঠনতন্ত্র পেলেই তফসিল ঘোষণা করতে পারব।

নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আমরা প্রশাসনের দেওয়া রোডম্যাপের নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছি। বিভিন্ন সংগঠনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা করেছি। গঠনতন্ত্র সংস্কারের প্রস্তাবনায় অংশীজনের মতামত শেষে আলোচনায় বসে একটি চূড়ান্ত খসড়া করব। ওই খসড়া আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে আমরা উপাচার্যের কাছে জমা দেব। তারপর সেটি সিন্ডিকেটে তোলা হবে। আমরা আশা করি নির্ধারিত সময়েই জাকসু তফসিল ঘোষণা করা হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত