চট্টগ্রাম নগরীর কাপাসগোলায় বেপরোয়া গতির একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা হিজড়া খালে পড়ে ৬ মাস বয়সী শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় সাড়াশি অভিযান শুরু করেছে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা। এক সময় অলিগলিতে অল্প কিছু রিকশা চলতে দেখা গেলেও দুই বছর ধরে বেপরোয়া এই যান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরের মূল রাস্তা। এতে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে অঙ্গহানি, প্রাণহানি।
ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও ৫ আগস্ট অভ্যুথানের পর মাথা চড়া দিয়ে উঠে এই রিকশা। ফলশ্রুতিতে অলিগলি ছেড়ে ট্রাফিক পুলিশকে তোয়াক্কা না করে নগরের প্রধান সড়কে চলছে এই দ্রুতযান।
তবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সচল হওয়ার পর বেড়েছে ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান। সিএমপির চারটি ট্রাফিক জোন সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিলের ২২ দিনে চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ ও ডাম্পিং হয়েছে ২৮৯৬টি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ জব্দ ও মামলা হয়েছে ট্রাফিক পশ্চিম জোনে ১০৯৪টি, ট্রাফিক উত্তরে ৮২৯টি, ট্রাফিক দক্ষিণে ৮১৫ ও বন্দরে ১৫৮টি।
ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) সুশোভবন চাকমা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঈদের আগে এসব বেপরোয়া ব্যাটারি রিকশা জব্দ করলে কিছুদিন পর নিয়ে যেত চালকরা। ঈদের পর থেকে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে ২১ দিন পর্যন্ত ডাম্পিংয়ে থাকছে এইসব যান। তিনি বলেন, একা ট্রাফিকের পক্ষে এত বড় রিকশা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে যাত্রীরা সচেতন হলে তাদের দৌরাত্ম্য কমে আসবে।
ট্রাফিক উত্তর বিভাগের ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) কামরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, জব্দ ব্যাটারি রিকশা ডাম্পিংয়ে পাঠানো হচ্ছে। আমাদের জোনে এখন পর্যন্ত ৮২৯টি ব্যাটারি চালিত রিকশা জব্দ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের সড়কে চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এই অভিযান চলমান রাখবো।
ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই শহরে ঠিক কয়টা ব্যাটারি রিকশা চলে তা জানা কঠিন তবে অসম্ভব না। কিন্তু যারা আমদানি করে বা সংযোজন করছে বা যেখানে এইসব চার্জিং-এ যাচ্ছে সেখানে কঠোর না হলে সড়কে তাদের নিয়ন্ত্রণ কঠিন। তাছাড়া আমাদের ট্রাফিকের সদস্যরা তাদের দাঁড়াতে সিগন্যাল দিলে তারা হয় দ্রুত গতিতে ইউটার্ন নিয়ে অন্যের উপর রিকশা তুলে দিচ্ছে না হয় আমাদের সদস্যকে ধাক্কা দিয়ে আহত করছে। তবে ট্রাফিকের চারটি জোনেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। সাথে জেলা প্রশাসনও এগিয়ে এসেছে তাদের নিয়ন্ত্রণে।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত সোমবার থেকে ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে তারা অভিযান চালাচ্ছেন ব্যাটারি রিকশার চার্জিং স্টেশনে। এর মধ্যে সোমবার নগরের অক্সিজেন, চাঁন্দগাও ও ডবলমুরিং জোনে অভিযান পরিচালনা করে ১৫৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয় চার্জিং স্টেশনের মালিকদের।
অভিযানের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈনুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা নগরের বেশ কিছু স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ব্যাটারি রিকশাকে জরিমানা করেছি। পাশাপাশি চার্জিং স্টেশনের মালিকদের সতর্ক করে বিদ্যু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। সামনে থেকে আমাদের এ অভিযান আরও বড় পরিসরে হবে।