গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতাল হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কাটামোড় এলাকায় এই সমাবেশ হয়।
সমাবেশে তীর-ধনুকসহ বিভিন্ন দাবি সংবলিত ফেস্টুন নিয়ে সাঁওতাল নারী-পুরুষ অংশ নেন। গোবিন্দগঞ্জ সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
এতে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে। বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. খায়রুল চৌধুরী, লেখক-গবেষক পাভেল পার্থ, এএলআরডির পরিচালক শামসুল হুদা, এএলআরডির আইন বিষয়ক কর্মকর্তা অ্যাড. রফিক সিরাজী, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, মানবাধিকারকর্মী গোলাম রব্বানী মুসা, সাঁওতাল নেতা বার্নাবাস টুডু, আইনজীবী মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক, রেজাউল করিম মাস্টার, ময়নুল ইসলাম, স্বপন শেখ, সাঁওতাল নেত্রী প্রিসিলা মুরমু, সুফল হেমরম প্রমুখ।
সমাবেশের আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাঁওতাল পল্লি জয়পুর ও মাদারপুর গ্রাম থেকে এসে লোকজন উপজেলা সদরের কাটামোড় এলাকায় সমবেত হন। পরে তারা সেখানে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল শেষে পুনরায় কাটামোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, অগ্নিসংযোগ,গুলিবর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামিরা এখনো অধরা। বিচার হয়নি হত্যা মামলার। মামলার আসামি সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দসহ অন্য মূল আসামিদের কেউই গ্রেপ্তার হয়নি। গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আবুল কালাম ও শাকিল পলাতক। ঘটনার ৯ বছরেও গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার হয়নি।
বক্তারা বলেন, সাঁওতাল পল্লীতে ইপিজেড নির্মাণের নামে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের ভেতরে সাঁওতালদের বাপ-দাদার তিন ফসলি জমি থেকে উচ্ছেদের পায়তারা করছে। সাঁওতাল শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু ও মঙ্গল মারডির রক্তে ভেজা জমিতে ইপিজেড চায় না। বাগদা ফার্মের ১ হাজার ৮৪২ একর জমি সাঁওতালদের ফিরিয়ে দিতে হবে। সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের টিকিয়ে রাখতে তাদের নির্যাতন ও উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান বক্তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ, চিনিকল কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে শ্যামল, মঙ্গল, রমেশসহ ৩ সাঁওতাল নিহত এবং উভয়ে অন্তত ৩০ জন আহত হন। এই ঘটনার পর থোমাস হেমরম বাদী হয়ে গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) আবুল কালাম আজাদসহ ৩৩ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার পর থেকে বিচারের দাবিতে সাঁওতালরা আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে।