মানুষের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ রিজিক বা জীবিকা। প্রতিটি মানুষই চায় তার আয়-উপার্জনে যেন বরকত আসে, দুশ্চিন্তা ও অভাব যেন না ঘিরে ধরে। কিন্তু রিজিক কেবল চেষ্টা বা বুদ্ধিমত্তার ফলেই আসে না, বরং এর পেছনে রয়েছে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ও বিধান। হাদিসের আলোকে জানা যায়, রিজিক নির্ধারিত হলেও কিছু আমল রয়েছে, যেগুলো রিজিকের প্রসারতা এনে দেয় এবং জীবনের অভাব-অনটন দূর করে দেয়। মানবসভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায়, যারা মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখেছে, তার নির্দেশ মান্য করেছে এবং জীবনের প্রতিটি ধাপে তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের রিজিকে বরকত নেমে এসেছে। নবী-রাসুলদের জীবনে, সাহাবায়ে কেরামের জীবনে, এমনকি আমাদের আশপাশের বহু আল্লাহভীরু মানুষের জীবনেও সেটার বহু বাস্তব দৃষ্টান্ত রয়েছে। রিজিক বৃদ্ধির আমলগুলো একদিকে যেমন আত্মিক প্রশান্তি দেয়, অন্যদিকে আল্লাহর প্রতি গভীর সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করে। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে রিজিক বৃদ্ধির সাতটি উপায় তোলে ধরা হলো।
তওবা-ইস্তিগফার : তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে উন্নতি দান করবেন, তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ (সুরা নুহ ১০-১২)
তাকওয়া অবলম্বন : যেসব আমলে রিজিক বাড়ে সেগুলোর মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন করা অন্যতম। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ (সুরা সাদ ৩৫)
হজ-ওমরাহ পালন : হজ ও ওমরাহ পালন করার দ্বারা রিজিকে বাড়ে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা লাগাতার হজ ও ওমরাহ পালন করতে থাকো। কারণ এর দ্বারা এমনভাবে অভাব ও গুনাহ দূরীভূত হয়; যেমনভাবে কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে দেয়।’ (জামে তিরমিজি)
সময়মতো নামাজ আদায় : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ (সুরা তাহা ১৩২)
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা : রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম আমল আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করতে এবং তাদের হক যথাযথভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং আয়ু দীর্ঘ করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (সহিহ বুখারি)
দান-সদকা করা : দান-সদকা করার মাধ্যমে রিজিক বাড়ে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো; তিনি তার বিনিময় দেবেন। তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা ৩৯) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করে। তাদের একজন বলে, হে আল্লাহ! দানকারীকে তার দানের জন্য উত্তম প্রতিদান দিন। অন্যজন বলে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।’ (সহিহ বুখারি)
বিয়ে : মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদের বিয়ে করিয়ে দাও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। কারণ আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নুর ৩২) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষকে সাহায্য করাকে মহান আল্লাহ নিজ দায়িত্ব হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তিন শ্রেণির অন্যতম হলো বিয়ে করতে আগ্রহী সেই ব্যক্তি, যিনি বিয়ে করে পবিত্র জীবনযাপন করতে ইচ্ছুক।’ (জামে তিরমিজি)