পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মানবিক করিডর তৈরি করতে চায় জাতিসংঘ। এ বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে নীতিগতভাবে সম্মত আছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গতকাল রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি জানান, ‘জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে। এটি হবে কেবল একটি মানবিক প্যাসেজ। তবে আমাদের কিছু শর্তাবলি রয়েছে, যা পূরণ করতে হবে। আমি বিস্তারিত শর্তাদি উল্লেখ করছি না, তবে যদি সেগুলো মানা হয়, তাহলে আমরা এই সহায়তায় এগিয়ে আসব।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাত বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। কারণ, বর্তমানে বিপুলসংখ্যক মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
তিনি আরও জানান, মিয়ানমার সীমান্ত
এখন নন-স্টেট অ্যাক্টরদের (রাষ্ট্রবহির্ভূত শক্তি) নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো বাস্তবিক কর্র্তৃত্ব সেখানে বিদ্যমান নেই। ফলে, বাংলাদেশের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে নন-স্টেট অ্যাক্টরদের সঙ্গে সরাসরি আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব নয়, তবে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কিছু অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে।
ভারত-পাকিস্তান ভ্রমণ বিষয়ে সতর্কতা : প্রয়োজন ছাড়া সফর নয়
একই সংবাদ সম্মেলনে ভারত ও পাকিস্তান ভ্রমণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এখনো বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ‘ভ্রমণ সতর্কতা’ জারি করেনি। তবে তিনি পরামর্শ দেন, নিতান্ত প্রয়োজন না হলে এ দুটি দেশ সফর এড়িয়ে চলাই সমীচীন হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো কোনো ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেনি। কিন্তু যাদের বিশেষ প্রয়োজন নেই, তারা এই সংঘাতের সময়ে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকাই ভালো হবে।’
ভারতে বাংলাদেশি গ্রেপ্তার : যাচাই ছাড়া সিদ্ধান্ত নয়
ভারতে প্রায় এক হাজার ‘বাংলাদেশি’ অবৈধ অভিবাসী আটক হওয়ার খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা কেবল সংবাদপত্রের মাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে পেরেছি। ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো নোটিস আমরা পাইনি।’
তিনি স্পষ্ট করেন, ‘বাংলাদেশি নাগরিক কি না, তা যাচাই ছাড়া আমরা কাউকে ফেরত নেব না। কারণ, ভারতে বিপুলসংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী রয়েছে। বাংলায় কথা বললেই তিনি বাংলাদেশি এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। যদি প্রমাণিত হয় যে, আটক ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিক, তাহলে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চালানো হবে।’
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রভাব : বাংলাদেশ সতর্ক
ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক উত্তেজনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের আন্তঃনির্ভরশীল বাস্তবতায় কোনো সংঘাতই একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। আমাদের সরাসরি কোনো পক্ষ নেওয়ার প্রশ্ন নেই, তবে সংঘাতের প্রভাব অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ওপর পড়তে পারে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘ভারত দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়েছিল, যা তারা সাম্প্রতিক সময়ে প্রত্যাহার করেছে। এখন আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে বিকল্প পথ খুঁজে নিতে হবে। পাকিস্তান থেকেও যদি তুলা আমদানির প্রয়োজন হয়, তা চলমান দ্বন্দ্বের প্রভাব বিচার করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
মধ্যস্থতা বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান : আগ বাড়িয়ে নয়
কাশ্মীরসহ ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের কোনো মধ্যস্থতাকারী ভূমিকায় যাওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় থাকুক। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের কোনো ধরনের মধ্যস্থতার ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন বা পরিকল্পনা নেই।’
তিনি বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা চাই তারা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করুক। যদি কোনো পক্ষ আমাদের মধ্যস্থতার জন্য অনুরোধ করে, তখন সরকার তা বিবেচনা করতে পারে। তার আগে আগবাড়িয়ে কোনো ভূমিকা নেওয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে শুনেছি যে কিছু দেশ মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হলো এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা এবং শান্তি নিশ্চিত করা।’