বড়াইগ্রামের মৌখাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে আগের তারিখ দেখিয়ে গোপনে তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি নির্ধারিত সময়ে আবেদন করেননি এমন প্রার্থীকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষকসহ একটি চক্র। এ ব্যাপারে ইউএনওর কাছে গত ২৭ এপ্রিল লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, গত ৯ এপ্রিল বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী পদে নাজমুল হাসান, নৈশপ্রহরী পদে রুবেল রানা এবং নিরাপত্তাকর্মী পদে জোবায়ের হোসেন যোগদান করেন। কিন্তু এসব কর্মচারী পদে কবে কোথায় নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে তা বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীসহ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ বেশিরভাগ সদস্য জানেন না। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক ভোরের ডাক ও একটি স্থানীয় পত্রিকায় বিদ্যালয়ের তিনটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সে সময় প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করা হলেও নানা কারণে নিয়োগ দিতে না পারায় বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
পরে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ওই দুটি পত্রিকায় পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব ইউএনওকে দেওয়া হলে ওইসব পদে আর নিয়োগ হয়নি। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনজনের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ২০২৩ সালের মেয়াদোত্তীর্ণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আগের তারিখ দেখিয়ে সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সই জাল করে এসব পদে নিয়োগ দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনা জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীসহ স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পৌর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব উন্নয়ন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বকুল বলেন, ‘২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে কিছু কারণে তারা প্রায় ১৬ মাস পর যোগদান করেছেন। এ সময় আগেই নিয়োগ দেওয়া হলে আবার পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক চাপে দিয়েছিলাম। কিন্তু নিয়োগ দেওয়া পদে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যায় কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য শাহীন আলম বাকি বলেন, ‘প্রথমে বিজ্ঞপ্তি দিলেও নানা কারণে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পরে সরকার পতন হওয়ায় সে নিয়োগও হয়নি। কিন্তু এখন শুনছি, নিয়োগ ও যোগদান নাকি হয়ে গেছে। এমনকি সে সময় আবেদনই করেনি, এমন দুজনকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কবে কীভাবে এসব নিয়োগ দেওয়া হলো তা আমরা জানি না।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতি আল আজাদুল বারী ওরফে আজাহার ফকির বলেন, ‘আমি এসব নিয়োগের ব্যাপারে কিছু জানি না।’
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইউএনও লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। কীভাবে এসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা চেয়েছি। লিখিত জবাব পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’