আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে শিক্ষা সংকট চলছে, তা বহুমুখী। বড় দাগে কয়েকটা সংকটের কথা উল্লেখ করছি। প্রথম কথা হচ্ছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মক ধরনের দলীয় রাজনীতিতে আক্রান্ত হয়েছে। এই রাজনীতি আমাদের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানকে বড় ধরনেরর ক্ষতি করেছে জাতীয় পর্যায়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্ধ, হিংস্র, দলান্ধ রাজনীতি আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। এটা হচ্ছে, প্রধান সমস্যা। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে প্রায়োগিক জগতের তত্ত্বের সঙ্গে বাস্তবতার যে মেলবন্ধন, শিক্ষার সঙ্গে প্রায়োগিক জগতের মেলবন্ধন এটা ঠিকমতো করতে পারিনি। বিশেষ করে, একাডেমিয়া করপোরেশন যোগাযোগ ভালোভাবে করতে পারিনি। এরপর হচ্ছে, সত্যি কথা বলতে কি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক পদ্ধতিগত দুর্বলতা রয়েছে। যেমন মূল্যায়ন পদ্ধতি, সময়ে সময়ে কোয়ালিটি গ্রুপ মেইনটেইন করতে যে কাজগুলো করতে হয়, সেগুলো এখনো তুলনামূলকভাবে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। তবে ২০০৫-২০০৬ থেকে কিছু কাজ হয়েছে। তবে এখনো সেটা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এরপর যদি বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বিনিয়োগ কম। আমরা এখনো সরকারের ওপর ভীষণভাবে নির্ভর করছি। এই নির্ভরশীলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থায় অতিরিক্ত সরকারিকরণ হয়েছে।
টারসিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে স্বাধীনতা দরকার, অটোনমি দরকার সেটা সরকারের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারছি না। সত্যিকার অর্থে, রিসার্চ ফান্ডিং বা উচ্চশিক্ষার ফান্ডিংয়ের জন্য মূলত নির্ভর করতে হবে, ক্রাউড সোর্সিংয়ের ওপর। কমিউনিটি এবং প্রাইভেট সেক্টরের ওপর র্নিভর করতে হবে। এভাবে অর্থ জোগাড় করতে হবে। সরকারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে বিভিন্ন কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, কোনো সরকার কখনো বড় বাজেটের চাওয়া পূরণ করতে পারবে না। এটা বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড বা অক্সফোর্ডের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। এই টাকা মূলত আসে ক্রাউড সোর্সিংয়ের মাধ্যমে। এর একটা সোর্স হচ্ছে সমাজ, আরেকটা হচ্ছে করপোরেট বা প্রাইভেট সেক্টর। যদিও ব্যাপারগুলো খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এটা করা ভীষণ প্রয়োজন। না হলে উচ্চশিক্ষার মূল সমস্যা দূর করা কখনো সম্ভব নয়। বর্তমানে প্রকৃত সমস্যা এটাই। এছাড়াও অনেক কিছু রয়েছে। কিন্তু বিস্তারিতভাবে তা বলতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি উন্নত, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার পরিবেশ তৈরি করতে না পারি তাহলে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত কোনো উদ্যোগই সফলতা পাবে না।
লেখক : উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়