সিরাজগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তাদের বিকাশে ঘুষের টাকা পাঠিয়ে প্রকাশ্যে মাদকের কারবারি চলছে। ফলে সিরাজগঞ্জ জেলাজুড়ে মাদক সেবন ও বিক্রি বেড়েছে কয়েক গুণ। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার লাইসেন্সধারী ৮টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র ও মাদক কারবারিদের লাইসেন্স নবায়নে প্রতি মাসে সিরাজগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. রুহুল আমিনের ব্যক্তিগত বিকাশ অ্যাকাউন্টে ঘুষের টাকা পাঠাতে হয়। না পাঠালে চলে অভিযান। দীর্ঘদিন যাবৎ সিরাজগঞ্জে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসে চলছে এ ধরণের নানা অপকর্ম। আর যারা ঘুষের টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে, তারা নির্বিঘ্নে কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।
ডিএনসি কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিনের ব্যক্তিগত বিকাশ অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসের লেনদেনের একটি তালিকা পেয়েছে দেশ রূপান্তর। এ তালিকা থেকে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। ডিএনসির কর্মকর্তারা মহাসড়কে অভিযানকালে সোর্সের মাধ্যমে তল্লাশির সময় যাত্রীদের কাছে থেকে দামি মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এরপরই ডিএনসির প্রধান কার্যালয় এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। এরপরেও থেমে নেই এই অবৈধ লেনদেন ও দুর্নীতি। বিকাশ লেনদেনে বিষয়টি একাধিক ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্বীকারও করেছেন।
বগুড়া ফরেন লিকারের ম্যানেজার প্রদীপ কুমারের নিজস্ব বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিমাসে ডিডির বিকাশ অ্যাকাউন্টে ১৫ হাজার টাকা পাঠানো হয়। এ বিষয়ে বগুড়া ফরেন লিকার ম্যানেজার প্রদীপ কুমার বলেন, ডিডি স্যারকে আমরা প্রতিমাসে খুশি হয়ে এটা দেই।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ খুবই উদ্বেগজনক। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তদন্ত করে এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
উল্লাপাড়া উপজেলার পৌর সদরের ঘোষগাঁতী মহল্লার মাদক কারবারি সবুজ আহমেদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে দুইবার ডিডির অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে মাদক কারবারি সবুজ আহমেদ বলেন, ডিডি স্যার একবার উল্লাপাড়া থেকে মাছ কিনেছিলেন। মাছটি পচা হয়েছিল। ফলে আমি মাছ ব্যবসায়ীর কাছে থেকে টাকাটা ফেরত নিয়ে স্যারের বিকাশ অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়।
আল আয়াত মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক সুলতান হোসেন বলেন, এ কারবার করতে হলে অনেক জায়গায় অনেক কিছু করতে হয়। স্যারের জন্যও কিছু করি।
জান্নাতী ট্রেডিংয়ের পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার বিকাশের দোকান আছে। সেখান থেকে তো অনেক লোকই টাকা পাঠায়, কে কাকে পাঠায় তা আমি বলতে পারলাম না।
উল্লাপাড়া মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক হাসান আলী বলেন, ব্যবসা করতে হলে অনেক কিছু করতে হয়। সব কথা বলা ঠিক না। তবে আমার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিমাসে কীভাবে স্যারের বিকাশে টাকা যায়, তা আমি বলতে পারব না।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক জানান, লাইসেন্স নবায়নের জন্য প্রতি বছর অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। প্রতিটি লাইসেন্সের নবায়নে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ ডিএনসির উপ-পরিচালক মো. রুহুল আমিন বলেন, আমার ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। কারা টাকা দিয়েছে, তা আমি বলতে পারছি না।
এ বিষয়ে ডিএনসির রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক(ডিজি) আলী আসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে খোজখবর নেওয়া হচ্ছে। আপনাদের কাছে কোনো প্রমাণ থাকলে আমাদের দিয়ে সহযোগিতা করবেন।