চট্টগ্রামে রনজিৎ দত্ত নিলক নামে এক যুবক খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। রনজিৎ 'জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস' নামে একটি ওষুধ কোম্পানির সিনিয়র মেডিকেল প্রমোশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার (৯ মে) রুনা আক্তার নামে এক নারী রনজিৎকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে নেয়। এরপর কথিত স্বামীর সহযোগীতায় রনজিৎ এর সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়। পুলিশে জানাজানির ভয়ে রনজিৎকে দ্বিতল ভবনের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করে তারা।
৯৯৯-এ কল পেয়ে রনজিতের লাশ উদ্ধারের ৮ ঘণ্টা না যেতেই অভিযুক্ত রুনাকে শনিবার (১০ মে) দিবাগত রাত ১১টায় এবং তার কথিত স্বামী ইব্রাহিম খলিলুল্লাহকে রবিবার (১১ মে) দুপুরে গ্রেপ্তার করে নগর পুলিশ। জিজ্ঞাসবাদে দুজনেই পুলিশকে রনজিৎ খুনের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
চাঞ্চল্যকর খুনের এ ঘটনা নিয়ে রবিবার (১১ মে) বিকেলে সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) হোসাইন মো. কবির ভূইয়া জানান, চক্রটি মূলত ‘হানিট্র্যাপ’ বা ‘মধুফাঁদ’ পেতে চাকরিজীবী ও পেশাজীবীদের টার্গেট করে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়।
পুলিশ জানায়, নিহত রনজিৎ দত্ত নিলকের বাড়ি পটিয়া থানার মোজাফফরাবাদ গ্রামে। স্ত্রী-পরিবার নিয়ে তিনি থাকতেন চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলী এলাকায়।
গ্রেপ্তার রুনা আক্তার সীতাকুণ্ড থানার মধ্যম সেলিমপুর গোলাম রহমান চৌধুরী বাড়ির মৃত মোস্তফা সওদাগরের মেয়ে৷ তার কথিত স্বামী ইব্রাহিম খলিল্লাহ ওরফে মিজান ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার সোনাপুর গ্রামের আমিরাবাদ এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। দুজনেই নগরের পাহাড়তলী বাজার এলাকার একটি ভবনের ‘স্বামী-স্ত্রী’ পরিচয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
পুলিশ জানায়, গত ৯ মে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ৯৯৯-এ এক পথচারীর ফোন পেয়ে পাহাড়তলী বাজার এলাকায় সুলতান ভবনের ছাদ থেকে অজ্ঞাত পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে একইদিন বিকেলে স্বামীর খোঁজ না পেয়ে রনজিৎ দত্তের স্ত্রী শিপ্রা মজুমদার পাহাড়তলী ও আকবর শাহ থানায় যোগাযোগ করেন। একটি লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে শিপ্রা মজুমদার ছুটে যান ডবলমুরিং থানায়। সেখানে গিয়ে স্বামীর মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি। এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা হোসাইন কবির বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ৮ ঘণ্টার মধ্যে রুনা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইব্রাহিমের তথ্য দেয় রুনা আক্তার। রবিবার দুপুরে ইব্রাহিম খলিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার দেখানো মতে ভিকটিমের মোবাইল, স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়েছে।’
পুলিশ জানায়, হানিট্র্যাপে ফেলে রনজিৎ দত্তের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করেন রুনা আক্তার। এরপর তাকে ফাঁদে ফেলতে বাসা ভাড়া নেন রুনা। ওই বাসায় রনজিৎকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় খলিলের মাধ্যমে। ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নেশাজাতীয় কিছু পান করিয়ে রনজিৎকে অচেতন করে তারা হাতিয়ে নেয় সর্বস্ব৷ এ ঘটনা পুলিশকে জানিয়ে দিতে পারে এমন ভয় থেকে রনজিৎকে পার্শ্ববর্তী একতলা ভবনের ছাদে ধাক্কা মেরে ফেলে হত্যা করা হয়।