বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের রিমান্ড শুনানি সময় হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। শুনানি শেষে বিএনপিপন্থী কিছু আইনজীবী মমতাজকে লিফটে তুলতে বাধা দেন। কোনো কেনো আইনজীবী ‘ফাইট্টা যায়’ ‘ফাইট্টা যায়’ স্লোগান দেন। তারা মমতাজের লিফটে ওঠা নামা নিয়ে পুলিশের সাথে কথা-কাটাকাটিতে লিপ্ত হন।
আইনজীবীরা এসময় মমতাজকে হাঁটিয়ে হাজতখানায় নেওয়ার দাবি তোলেন। আইনজীবীদের কেউ কেউ তাকে মারতে উদ্যত হন। পরে এ নিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি হলে অতিরিক্ত পুলিশ এসে মমতাজকে লিফটে করে নিচে নামিয়ে হাজত খানায় দ্রুত প্রবেশ করে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার মমতাজের রিমান্ড ও জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এমন চিত্র দেখা যায়। আদালতের বিচারক জুয়েল রানা তার আদেশে মমতাজের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বেলা তিনটার কিছু পরে মমতাজের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। আদালতে রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন মহানগর পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) ওমর ফারুক ফারুকী।
তিনি শুনানিতে বলেন, যখন মমতাজ গান গাইতেন তখন তাকে সব দলমতের মানুষ পছন্দ করত। কিন্তু মানুষের সেই ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে গানকে ব্যবহার করে মমতাজ বেগম স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছে। সিংগাইর এলাকার মানুষজন খুবই সহজ সরল। তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয় মমতাজ বেগম। আমাদের পার্লামেন্টে এক মিনিটে খরচ হয় কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু তিনি সেই পার্লামেন্টে শেখ হাসিনাকে নিয়ে গান গাইতেন। তিনি গানে বলেন, শেখ হাসিনার মতো নেত্রী বিশ্বে নাই। এসময় সবাই শেম শেম বলতে থাকেন তার নেতৃত্ব আসা প্রসিকিউশন টিম।
তিনি আরও বলেন, মমতাজ নাকি আরও বলেন— খালেদা জিয়ার বাবার নাম নাকি তিনি জানেন না। এটা কেমন কথা। দেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে নিয়েও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন এই মমতাজ। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে মমতাজদের মতো শিল্পীরা কেউ গান গেয়ে, কেউ ক্রিকেট খেলে, কেউ কবিতা লিখে, কেউ অভিনয় করে উজ্জীবিত করেছে। শেখ হাসিনার যখন মন খারাপ থাকতো, অবসর সময় কাটাতো তখন মমতাজ তাকে গান শুনাতো। হাসিনা ফ্যাসিজমকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মমতাজদের মতো শিল্পীদের ব্যবহার করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মমতাজরা শেখ হাসিনাকে উজ্জীবিত করেছে। অপর দিকে মমতাজের আইনজীবী রেজাউল করিম অপরপক্ষের আইনজীবীদের তোপের মুখে এদিন শুনানি করবেন না বলে জানান।
চারদিনের রিমাণ্ড আদেশ শেষে মমতাজকে যখন লিফটে তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল তখন আইনজীবীদের কেউ কেউ বলেন, বিএনপির অনেক নেতাকে লিফটে নিতে দেওয়া হয়নি। হেঁটে হেঁটে তোলা হয়েছে। তাকে সাত তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে। এ দাবি নিয়ে এজলাসের গেটের সামনে কিছু আইনজীবী অবস্থান নেন। একপর্যায়ে নিরাপত্তার স্বার্থে মমতাজকে এজলাসে রাখা হয়।
আদালত আইনজীবীদের এজলাস ত্যাগের নির্দেশ দেন। পরে মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আইনজীবীদের এজলাস ত্যাগ করতে বলেন। অইনজীবীরা এজলাস ত্যাগ করে গেটের সামনে অবস্থান করেন। প্রায় ২০ মিটিন এমন পরিস্থিতি চলার পর নিরাপত্তা বাড়িয়ে মমতাজকে লিফটে তুলে নিচে নামিয়ে এনে হাজতখানায় নেওয়া হয়।