টেকসই উন্নয়নের যাত্রাপথে সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে প্রবেশাধিকার একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং যেখানে জনসংখ্যা ১৭ কোটিরও বেশি জ্বালানি সেখানে শুধু একটি উন্নয়ন ইস্যু নয়, এটি একটি ন্যায়ের বিষয়। এনার্জি জাস্টিস (জ্বালানি সুবিচার) ধারণাটি এমন একটি সমাজ গঠনের কথা বলে, যেখানে জ্বালানির উৎপাদন, বিতরণ ও ব্যবহারের সুফল ও বোঝা সমাজের সব শ্রেণির মধ্যে সমভাবে ভাগাভাগি হয় এবং এ লক্ষ্যে জ্বালানি রূপান্তর ন্যায্য হতে হয়। গত দুই দশকের জ্বালানি রূপান্তরে জ্বালানিতে প্রবেশাধিকার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও, বাংলাদেশ আজ এক গভীর জ্বালানি সুবিচার সংকটের মুখোমুখি যা কাঠামোগত বৈষম্য, নীতিগত দুর্বলতা এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন। জ্বালানি রূপান্তর ন্যায্য ও যৌক্তিক হলে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হতো না।
উন্নয়নের বৈপরীত্যে জ্বালানি সুবিচার : বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রবেশাধিকার সম্প্রসারণে যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে, তা স্বীকার করা প্রয়োজন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯ সালে যেখানে মাত্র ৪৭ শতাংশ পরিবারে বিদ্যুৎ ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে ৯৮ শতাংশের বেশি হয়েছে। মেগা অবকাঠামো প্রকল্প, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং জাতীয় গ্রিড সম্প্রসারণ এই রূপান্তরে অবদান রেখেছে। তবে বিদ্যুৎ প্রবেশাধিকার মানেই জ্বালানি সুবিচার নয়। অনেক গ্রামীণ ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী এখনো ঘন ঘন লোডশেডিং ও ভোল্টেজ সমস্যায় ভোগেন এবং উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য হন। নামমাত্র প্রবেশাধিকার ও প্রকৃত সেবার মানের এই ফারাকই জ্বালানি সুবিচারের মূল সংকট।
এছাড়া, বিদ্যুৎ অবকাঠামোর সম্প্রসারণ প্রক্রিয়াটি সবসময় জনগণকেন্দ্রিক ছিল না। অনেক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এনার্জি করিডর গড়ে তোলা হয়েছে স্থানীয় জনগণের পরামর্শ ছাড়াই, যার ফলে জীবিকা হারানো এবং পরিবেশ ধ্বংসের মতো ঘটনা ঘটেছে। যেমন রামপাল ও মাতারবাড়ীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিবেশবিদ ও মানবাধিকারকর্মীদের উদ্বেগের কারণ। এগুলো সুন্দরবনের মতো সংবেদনশীল পরিবেশ অঞ্চলে হুমকি তৈরি করছে এবং স্থানীয় জনগণকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসন ছাড়াই বাস্তুচ্যুত করেছে। এইসব জনগণের কণ্ঠস্বর নীতিনির্ধারণে সাধারণত উপেক্ষিত, যা প্রক্রিয়াগত বৈষম্যের প্রতিফলন।
অদৃশ্য সুবিচার সংকট : বাংলাদেশে জ্বালানি সুবিচার সংকটের আরেকটি প্রধান দিক হলো বিদ্যুতের মূল্য। বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির দাম বেড়েই চলেছে, যার ফলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো চাপের মুখে পড়ছে। শহরাঞ্চলের উচ্চআয়ের ভোক্তারা সাবসিডি বা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পেলেও, গ্রামীণ বা পেরি-আরবান অঞ্চলের বাসিন্দারা প্রায়শই উচ্চবিল ও অনির্ভরযোগ্য পরিষেবার মুখোমুখি হন। কিছু এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ চলে গেলে ডিজেল জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হয়, যা পরিবারগুলোর খরচ বাড়ায় এবং স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে।
প্রিপেইড মিটার যা স্বচ্ছ বিলিংয়ের সমাধান হিসেবে প্রচারিত হয়েছে, তাও নতুন সব সমস্যার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই অভিযোগ করেন যে, এই মিটারগুলো ত্রুটিপূর্ণ, হঠাৎ টাকা কেটে নেয় এবং কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সে বিষয়ে সচেতনতা কম। দিনমজুর, রিকশাচালক, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মতো যারা দৈনিক আয়ে বেঁচে থাকেন, তাদের মাসিক আয়ের একটি বড় অংশ বিদ্যুৎ খরচে চলে যায়, ফলে খাবার, চিকিৎসা বা শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত টাকা থাকে না।
আসল জ্বালানি সুবিচার তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে, যখন সব নাগরিকের আয়ের স্তর নির্বিশেষে মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যহারে নির্ভরযোগ্য জ্বালানিতে প্রবেশাধিকার থাকবে এবং তারা সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুযোগ পাবে।
জীবাশ্ম জ্বালানিতে নির্ভরতা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অবহেলা : বাংলাদেশের জ্বালানি মিশ্রণে এখনো প্রধানত জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা এবং আমদানি করা ফার্নেস অয়েলের ওপর নির্ভরতা রয়ে গেছে। এই নির্ভরতা শুধু কার্বন নিঃসরণ বাড়ায় না, বরং বিশ্ববাজারে জ্বালানি দামের ওঠানামার মুখে দেশকে অনিরাপদ করে তোলে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জ্বালানি আমদানির খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ তৈরি হয়েছে এবং সরকারকে অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত যেমন মূল্যহার বৃদ্ধি ও লোডশেডিংয়ের দিকে যেতে হচ্ছে। অথচ, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষ করে সৌরশক্তির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সারা বছর প্রাপ্ত পর্যাপ্ত সূর্যালোক ও এক সময় লাখ লাখ সোলার হোম সিস্টেম এর প্রমাণ। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় সৌরশক্তির প্রতি সমর্থন হ্রাস পেয়েছে। রুফটপ সোলার, সৌরচালিত সেচ পাম্প এবং কমিউনিটিভিত্তিক মাইক্রো-গ্রিডগুলো এখনো নীতিগত বাধা, অর্থায়নের ঘাটতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়হীনতার কারণে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ডিসেন্ট্রালাইজড নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থা জ্বালানি সুবিচারের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে, যা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়ন করবে, আমদানিনির্ভরতা কমাবে এবং সবুজ চাকরি সৃষ্টি করবে। কিন্তু, জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রভাব এই ভবিষ্যতের পথ নির্মাণে বড় বাধা। সাহসী নীতিগত ও বিনিয়োগ সংশোধন ছাড়া, ন্যায়ের সঙ্গে সবুজ জ্বালানি রূপান্তরের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
দুর্নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতায় জ্বালানি সুবিচার সংকট : জ্বালানি খাতের অন্যতম জরুরি সমস্যা হলো প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও পদ্ধতিগত দুর্নীতি। কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ঈঅই) জ্বালানি খাতের দুর্নীতির ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু ২০২২ সালেই দুর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি অপচয় হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা ফার্নেস অয়েল ক্রয়ে অনিয়ম এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (জঊই) আর্থিক দুর্ব্যবস্থা। ক্যাব ১৩ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অনানুষ্ঠানিক ও প্রতিযোগিতাহীন চুক্তি বাতিল, জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বে টেকনিক্যাল জনবল নিয়োগ এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (ইঊজঈ) স্বাধীনতা বৃদ্ধি। দেশের গ্যাস অনুসন্ধান জোরদার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন সম্প্রসারণ এবং জ্বালানি অডিটের মাধ্যমে অপচয় শনাক্ত করার কথাও বলা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলো শুধু আর্থিক ক্ষতির প্রতিকার নয়, বরং জ্বালানি সুবিচারের বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুত্বপূর্ণ। যখন জনগণের টাকায় দুর্নীতি হয়, তখন প্রয়োজনীয় সেবার মান পড়ে যায় এবং সবচেয়ে দরিদ্র জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জ্বালানি অপরাধ ও সুবিচার সংকট : বাংলাদেশে ‘জ্বালানি অপরাধ’ বলতে বোঝায় জ্বালানি খাতের সেসব দুর্নীতিপূর্ণ ও অনৈতিক কার্যকলাপ যা ভোক্তা, পরিবেশ এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর মধ্যে রয়েছে: (১) জ্বালানি আমদানিতে অতিমূল্যায়ন (ওভার ইনভয়েসিং), (২) অলস বা অকার্যকর ব্যক্তি খাত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ধারাবাহিক ক্ষমতা মূল্য পরিশোধ, (৩) ভোক্তাস্বার্থ বিরোধী অস্বচ্ছ মূল্যহার নির্ধারণ পদ্ধতি, (৩) রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট টেন্ডার ও ক্রনি ক্যাপিটালিজম এবং (৪) নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় জনগণের মতামতকে অগ্রাহ্য করা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, এসব অপরাধ অনেক ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত। এগুলো গোপনে নয়, বরং সরকারি নীতিমালার আওতায় ঘটে। এগুলোকে প্রায়ই উন্নয়ন বা জ্বালানি নিরাপত্তার প্রয়োজনে ‘ন্যায্য’ বলে উপস্থাপন করা হয়, কিন্তু এর পেছনে থেকে যায় এক দীর্ঘস্থায়ী অবিচার, বৈষম্য ও পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির ইতিহাস। জ্বালানি সুবিচার সংকটে নারী ও সমাজ : বাংলাদেশে জ্বালানি সুবিচার সংকট একটি লিঙ্গভিত্তিক বিষয়ও বটে। গ্রামাঞ্চলে নারীরা জ্বালানি দারিদ্র্যের সবচেয়ে বড় শিকার। তারা দীর্ঘ সময় কাঠ কুড়ানোর কাজে ব্যয় করেন বা ধোঁয়াযুক্ত চুলায় রান্না করেন, যা স্বাস্থ্যহানিকর এবং আয়ের কাজ বা শিক্ষা থেকে তাদের বঞ্চিত করে। বিদ্যুতের অভাব নারীদের চলাচল, নিরাপত্তা এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বাধা হয়। এই সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হওয়ার পরও, নেতৃত্ব বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীরা প্রায় অনুপস্থিত। একটি লিঙ্গ-ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের জন্য দরকার নারীদের ভোক্তা, উৎপাদক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে ক্ষমতায়ন করা। এর মধ্যে রয়েছে নারী নেতৃত্বাধীন সৌর উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সহায়তা, ক্লিন এনার্জি প্রযুক্তিতে নারীদের প্রশিক্ষণ এবং নারীকেন্দ্রিক বিদ্যুৎ প্রবেশাধিকার কর্মসূচি গ্রহণ। এ সবই জ্বালানির সুবিচার প্রতিষ্ঠার নিয়মক।
জলবায়ু ঝুঁকি ও ভবিষ্যতের জ্বালানি সুবিচার : বাংলাদেশ বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় অবকাঠামো ধ্বংস, জনগণকে বাস্তুচ্যুত সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। আমদানিনির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানি ও উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহ দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জ্বালানি পরিকল্পনায় জলবায়ু সহনশীলতাকে কেন্দ্রীয়ভাবে স্থান দিতে হবে। পরিষ্কার, বিকেন্দ্রীভূত এবং দুর্যোগ-সহনশীল জ্বালানি সমাধানের ওপর জোর দিতে হবে। ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তর কেবল পরিবেশগত লক্ষ্য নয়, এটি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে কেউই পেছনে পড়ে থাকবে না। এর মানে হলো, জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা, কমিউনিটি-নির্ভর নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে মালিকানা নিশ্চিত করা এবং আদিবাসী ও স্থানীয় জ্ঞানের সঙ্গে জ্বালানি উন্নয়ন নীতিমালা একীভূত করা। এই অন্তর্ভুক্তিমূলক পন্থায় বাংলাদেশ একটি ন্যায্য ও টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে। এ সবই জ্বালানির সুবিচার উন্নয়ন কৌশল হিসেবে বিবেচিত।
উপসংহার : জ্বালানি সুবিচারের কর্মপন্থা : বাংলাদেশে জ্বালানি সুবিচার সংকট কেবল একটি কারিগরি সমস্যা নয়। এটি অধিকার, সাম্য ও সুশাসন ব্যবস্থার প্রশ্ন। এটি আমাদের বাধ্য করে ভাবতে যে, কীভাবে জ্বালানি উৎপাদন, আমদানি, বণ্টন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, যা সব নাগরিকের প্রয়োজন ও মর্যাদাকে প্রতিফলিত করে। সরকার অবকাঠামো ও সংযোগে অগ্রগতি অর্জন করলেও, গঠনগত সমস্যাগুলো এখনো রয়ে গেছে। দুর্নীতি, ব্যয়বহুল সেবা, পরিবেশ ধ্বংস ও বর্জনমূলক নীতি সেইসব মানুষকে প্রান্তিক করে দিচ্ছে, যাদের জন্য জ্বালানি উন্নয়ন/রূপান্তর হওয়া উচিত। নইলে সে রূপান্তর ন্যায্য হয় না, জ্বালানি সুবিচার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। বাংলাদেশকে এখন একটি সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেন্দ্রীয়, জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর, প্রভাবশালী গোষ্ঠী-নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় এগিয়ে যাবে, নাকি একটি ন্যায্য, গণতান্ত্রিক ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তরের পথে হাঁটবে, যেখানে জনগণ ও প্রকৃতি অগ্রাধিকার পাবে। এখনই সময় একটি কর্মপন্থা গ্রহণের, যা ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও দীর্ঘমেয়াদি সহনশীলতার নীতিতে পরিচালিত হবে। কেবল তখনই বাংলাদেশে সত্যিকারের সুবিচারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ২০২৪ সেই নির্দেশনা দেয়।এজন্য কেবল দরকার বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্ষমতায়ন করা, যাতে তারা জ্বালানি রূপান্তরে সুশাসন ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে এই লক্ষ্যে কর্মপন্থা গৃহীত হতে হবে। জ্বালানি খাতের দুর্নীতি দূর করা, গণবান্ধব জ্বালানি রূপান্তর নীতির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা এবং ন্যায়সংগত জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করা এ সবই জনগণ চায়। এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহার করে পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্বচ্ছ নজরদারি নিশ্চিত করার মাধ্যমে তা করা সম্ভব। একটি দক্ষ অ্যাকাডেমিক ও গবেষণা সম্প্রদায় যদি সেসব ক্ষেত্রে এআই-ভিত্তিক সমাধানগুলোতে অবদান রাখে এবং ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তা যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহায়তায় জ্বালানি খাত ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা, নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আরও কার্যকরভাবে করতে পারবে। তাতে ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত হবে। জনগণের জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণ হবে। তারা জ্বালানি সুবিচার পাবে।
লেখক : জ্বালানি উপদেষ্টা, ক্যাব ও ডিন, প্রকৌশল অনুষদ
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়।