বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

বগুড়া

খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের

আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম

৪ বছরের আয়েশা। বাবা-মায়ের সঙ্গে সকালে জমিতে এসছে ভুট্টা তুলতে। বাবা-মায়ের কাজের সহযোগিতা না হলেও মনে শান্তি নিয়ে ভুট্টা তুলছেন তারা। পরিবারের একমাত্র কন্যাকে কার কাছে রেখে আসবেন, তাই সঙ্গে করে জমিতে নিয়ে এসছেন আলম দম্পতি। সেও খুব খুশি। সম্প্রতি বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার যমুনা নদী বিধৌত গ্রাম তেকানী চুকাইনগরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

শস্যভাণ্ডারখ্যাত বগুড়ায় দিন দিন বেড়েই চলছে ভুট্টা চাষাবাদ। জেলার প্রায় সকল উপজেলাতে এবার ভুট্টার আবাদ হয়েছে। চলতি বছরে জেলায় প্রায় ২ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। চলতি বছরে জেলায় ১৭ হাজার ৭২৪ হেক্টর জমি থেকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২ লাখ টন। গত বছর ১৫ হাজার ৩৪১ হেক্টর জমি থেকে ১ লাখ ৬১ হাজার ৭২৩ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছিল। সে হিসেবে জেলা এবছর ২ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমিতে গতবারের তুলনায় বেশি ভুট্টা আবাদ করেছেন জেলার চাষিরা। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ কাঁচা ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। সে হিসেবে জেলায় এ বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ভুট্টা বিক্রি করবেন চাষিরা।

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, স্বল্প খরচে লাভজনক হওয়ায় বগুড়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবে চাহিদা থাকায় বাজারে দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। এতে প্রতি বছরই বাড়ছে চাষের জমি। যমুনার চরাঞ্চলসহ গোটা জেলায় ভুট্টা চাষাবাদ হচ্ছে। ভালো ফলনের প্রত্যাশায় ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। এ বছর ভালো ফলন পেলে আগামী বছর চাষের জমি আরও বাড়বে। কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে তাদের চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষিবিভাগ।

সোনাতলা উপজেলার তেকানী চুকাইনগর গ্রামের চাষি আলম জানান, প্রতি বিঘা ভুট্টা চাষে খরচ হয় ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা। ফলন হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ মণ। বাজারে প্রতিমণ ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। অন্য কিছু চাষের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ ও সময় কম লাগে। তাই এবছর তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চর শনপচা, মথুরাপাড়া, তিতপরল এলাকার চাষিরা জানান, যমুনার বালুচরে ভাল ভুট্টার চাষ করা যায়। ভুট্টা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। সারিয়াকান্দির চর এলাকায় প্রতি বিঘা ভুট্টা চাষে সবমিলিয়ে খরচ হয় ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবং চরগুলোতে প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৪০ মণ ফলন হয়। যা বাজারে বিক্রি করে ভাল লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। জেলার ধুনট উপজেলার কৃষকরাও জানিয়েছেন একই কথা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য ফসলের তুলনায় দাম ও ফলন বেশি হওয়ায় এ ফসল চাষে ঝুঁকছে জেলার চাষিরা, বেড়েছে চাষের জমি। গত বছরের তুলনায় ২ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। বছরে দুইবার এফসল চাষ হয়ে থাকে। নভেম্বর মাসে বীজ রোপণ করে এপ্রিল মাসে একবার ফলন ঘরে তোলা যায়, আবার এপ্রিলের শেষে বীজ রোপণ করে জুন থেকে জুলাই মাসে ফলন পাওয়া যায়। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও ভুট্টার চাহিদা রয়েছে। খরচের দ্বিগুন লাভ পাওয়া যায় বলেই আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. নাজমুল হক মন্ডল জানান, আমাদের মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যাতে চরের জমি অনাবাদি না থাকে। ভালো ফসল উৎপাদনে পরামর্শ প্রদানসহ প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে কৃষকের পাশে কৃষি বিভাগ রয়েছে।

তিনি আরও জানান, এ বছর প্রায় ২ লাখ টন ভুট্টা প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় বিক্রি করবেন চাষিরা। এতে করে একদিকে কৃষকরা লাভবান হবে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত