দেশ রূপান্তর পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বাতিল হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার পুরনো জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম (পরিমার্জিত ২০২১) বিস্তরণ কারিকুলাম বিষয়ে শিক্ষকদের তিন দিনের প্রশিক্ষণ। শনিবার ( ১৭ মে) বিকেলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) চ.দা. মো. ইমামুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন মাধ্যমে এই আদেশ জারি হয়।
এর আগে শনিবার দুপুর ১২টা ২৮ মিনিটে দেশ রূপান্তর’র অনলাইন সংস্করণে ‘বাতিল কারিকুলামে প্রশিক্ষণের আয়োজনে ব্যয় ৪ কোটি’ শিরোনামে একটি নিউজ প্রকাশিত হয়। নিউজ প্রকাশের পর তোলপাড় হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে। এরপরই প্রাথমিক শিক্ষকদের শিক্ষাক্রমে বিস্তরণ প্রশিক্ষণটি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, “জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম ২০২১ (প্রাথমিক স্তর) পরিমার্জিত ২০২৫” জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি) কর্তৃক অনুমোদন করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কারিকুলাম সম্পর্কে মৌলিক ধারণা প্রদানের লক্ষে মাঠ পর্যায়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের নবনিয়োগকৃত সহকারী শিক্ষকদের “কারিকুলাম বিস্তরণ” তিন দিনের প্রশিক্ষণটি বাতিলসহ প্রশিক্ষণ বিভাগের ২৯ এপ্রিল ২০২৫ তারিখের ৩৮.০১.০০০.৬০১.৯৯.০০৩.২৩.১৮১; নম্বর পত্রটির কার্যকারিতা এতদ্বারা বাতিল করা হলো।” এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।
প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষায় বাতিল হওয়া জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম (পরিমার্জিত ২০২১) বিস্তরণ কারিকুলাম বিষয়ে প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টার। সারা দেশে ৩০১ টি ব্যাচের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রশিক্ষণ বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪০ টাকা।
অভিযোগ উঠেছে অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ বিভাগকে ম্যানেজ করে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টরগণ মাঠ পর্যায়ে এ প্রশিক্ষণের বরাদ্দ এনেছেন। প্রতি আর্থিক বছরের শেষ দিকে শিক্ষক প্রশিক্ষণের নামে ইন্সট্রাক্টরদের সুবিধা দিতে এমন আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। যে কারিকুলামের ওপর মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হচ্ছে, তা বাতিল করে নতুন কারিকুলামে প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষা চলমান রয়েছে।
বাতিল হওয়া কারিকুলাম প্রশিক্ষণ কোন কাজে আসবে না জেনেও অধিদপ্তর কেন প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে তা নিয়ে মাঠ পর্যায়সহ শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ধারণা করা হচ্ছে আর্থিক বছরের শেষ দিকে বিধায় সরকারের কোটি কোটি টাকা হরিলুট করার জন্যই এসব প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ডিভিশনের নবনিয়োগকৃত সহকারী শিক্ষকদের ৩ দিনের কারিকুলাম প্রশিক্ষণ ইতিমধ্যে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের অনুকূলে এ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ শাখা। প্রশিক্ষণ পরিচালনায় ইন্সট্রাক্টররা তোড়জোড় শুরু করেছে। ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সাথে সাথে কারিকুলাম স্থগিত করা হয়। জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নতুন মূল্যায়ন নির্দেশিকা প্রণয়ন করে মাঠ পর্যায়ে প্রেরণ করেছে। নতুন মূল্যায়ন নির্দেশিকার আলোকে গত ৫ মে থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ন শুরু হয়েছে।
এদিকে গত বছরের ২ জুলাই অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি এন্ড অপারেশন) মো. লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে ১ম শ্রেণি থেকে ৩য় শ্রেণির ধারাবহিক মূলায়ন (ডায়েরি-১ ও ডায়েরি-২) স্থগিত করা হয়। তবুও বিগত সরকারের প্রণয়নকৃত জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ বিস্তরণ বিষয়ক কারিকুলামের ওপর অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। আগামী ৩০ জুন ২০২৪-২৫ আর্থিক বছর শেষ হবে। প্রশিক্ষণের ইতিহাসে এই প্রথম প্রশিক্ষণার্থী প্রতি ৫০০ টাকা উপকরণ ও প্রশাসনিক খরচ বাবদ ব্যাচ প্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বিষয়ভিত্তিকসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণে উপকরণ বাবদ জন প্রতি ৬০ টাকা বরাদ্দ ও ইউআরসি কর্তৃক আয়োজিত বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে নামমাত্র ৩৫/৪০ টাকার উপকরণ দেওয়া হয়।