ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন একই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আগামী বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে লং মার্চ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর গেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। এসময় সাম্য হত্যাকে ঘিরে নোংরা রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে সাম্য হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো হলো:
১. সাম্যের হত্যাকারী সকলকে দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেফতার করে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
২. হত্যার আশেপাশের এলাকার সকল সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।
৩. ঘটনার সময় হত্যার সহযোগীদের জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। যেসব পুলিশ এই কাজের সাথে যুক্ত, তাদের দ্রুত জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
৪. শাহবাগ থানার পাশেই যে অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, এর সাথে সম্পৃক্ত সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সর্বোপরি শাহবাগ থানার আসামি ধরার ক্ষেত্রে স্পষ্ট গাফিলতির জবাবদিহিতা করতে হবে।
৫. সাম্যের হত্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি দৃশ্যমান। তার জানাজার সময়ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চলেছে এবং পরের দিন অর্ধদিবস শোক ঘোষণা করার প্রহসন করেছে। এই ধরনের প্রহসন ও গাফিলতি আমরা আর মেনে নেব না। প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের যেকোনো প্রয়োজনে আরও তৎপর হতে হবে।
৬. উপাচার্য, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তদন্ত ও বিচারের নিয়মিত ফলোআপ নেওয়া এবং দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ তৎপর থাকতে হবে এবং সেখানে সাম্যের পরিবার, বন্ধু ও সহপাঠীদের যুক্ত রাখতে হবে।
৭. ‘সাম্য হত্যার বিচার নিশ্চিতকরণ কমিটি’ করতে হবে, যাতে তদন্ত কর্মকর্তা, উপাচার্য, প্রক্টর, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক, শিক্ষক ও সহপাঠীদের প্রতিনিধি যুক্ত থাকতে হবে। আজকের মধ্যে এটি নিশ্চিত করতে হবে।
৮. সাম্য হত্যার বিচার নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব সংগঠন প্রতিবাদ জানায়নি, তাদের আমাদের সাথে এক হয়ে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
৯. ক্যাম্পাসসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সাম্যের সহপাঠী ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল নাহিয়ান বলেন, ‘সাম্য সবার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। কিন্তু আমরা দুঃখজনকভাবে দেখতে পাচ্ছি সাম্যের হত্যাকাণ্ডের পর তাকে নিয়ে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো বিভাজন ও নোংরা রাজনীতি করছে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে রাজনৈতিক দলাদলি আমাদের আশাহত করেছে। আমাদের প্রত্যাশা, সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ঐক্যবদ্ধ থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটি দুঃখজনক ব্যাপার হলো সাম্যকে নিয়ে অনলাইনে নানা ধরনের বাজে ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে। তার চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে। যে কুচক্রী মহল এই ঘৃণিত কাজ করছে, তাদের প্রতি নিন্দা জানাচ্ছি।’