বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি দলের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। একই অভিযোগ তুলেছেন অর্থ, পরিকল্পনা ও আইন উপদেষ্টার বিরুদ্ধেও। উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, উপদেষ্টাদের মধ্যে যারা বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সামনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা না বলে একটি দলের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছে, যা দেশের জন্য লজ্জাজনক।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ২০২২ সালের আইনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। এ আইনকে অন্তত ২০টি রাজনৈতিক দল বিরোধিতা করেছিল। বিএনপি এ আইনকে ‘বাকশালি’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। আমরা যখন নাগরিক কমিটিতে ছিলাম, আমাদের কাছেও প্রস্তাব এসেছিল যে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি পুনর্গঠন হবে। আমরা বলেছিলাম, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে যেসব আওয়ামী ফ্যাসিবাদী প্রভাব আছে এবং যেসব আইনকানুন রয়েছে, সেগুলো নিয়ে ঐকমত্যভিত্তিক সংস্কার না করলে দেশ গভীর সংকটে পতিত হবে। কিন্তু আমাদের দাবি উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার নানা কৌশলে ইসি পুনর্গঠন করেছে, যা সরাসরি গণআন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরানোর জন্য এবং মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানকে যদি সঠিকভাবে গঠিত না করা যায়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা মনে করি না। তাই নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। তিনি আরও ইসি একটি দলের মুখপাত্র বলেন, ইসির ফিটনেস আছে কি না, তার প্রথম কেস হিসেবে আমরা ধরে নেব স্থানীয় সরকার নির্বাচন। যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুন্দরভাবে আয়োজন করতে পারে, তাহলে আমরা মনে করব এ কমিশনের ফিটনেস রয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য।
অভিযোগের তীর উপদেষ্টাদের দিকেও : নাসীরুদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাকে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য ওয়াহিদউদ্দিন ভাই (শিক্ষা উপদেষ্টা) কাজ করছেন, দেশে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরকে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য সালেহউদ্দিন ভাই (অর্থ উপদেষ্টা) কাজ করছেন। আইন মন্ত্রণালয় ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য আসিফ নজরুল কাজ করছেন। তাদের এই কুসুম কুসুম খেলা আর চলবে না।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন অভিযোগ করে পাটওয়ারী বলেন, আমাদের আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ঘোষণাপত্র দেবেন। একবার মুলা দেখিয়েছিলেন ছাত্র-জনতাকে। ঘোষণাপত্র দেবেন বলেছিলেন, উনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এবার যদি হেরফের হয় আসিফ নজরুল বাংলাদেশে থাকবেন কি না জানি না।
বিএনপিকে হুঁশিয়ারি : বিএনপির উদ্দেশে নাসীরুদ্দীন বলেন, আপনারা জনসেবা উপেক্ষা করে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন, আজ পুরো ঢাকা অবরুদ্ধ। জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। এখনো নির্বাচন হয়নি, আর আপনারা আগেই জোর-জবরদস্তি শুরু করেছেন। নির্বাচন হলে তো আপনারা হাসিনার চেয়েও বড় ফ্যাসিস্ট হিসেবে আবির্ভূত হবেন।
বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, নিজেদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনুন। না হলে, জনগণ যেভাবে শেখ হাসিনাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, তেমনিভাবে আপনাদেরও ছুড়ে ফেলবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন কবে তা সরকারের এখতিয়ারভুক্ত : ইসি
স্থানীয় সরকার নির্বাচন কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত ইসির নয় বরং সরকারের এখতিয়ারভুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, এনসিপি যে দাবি তুলেছে, তা রাজনৈতিক বিষয়। এ প্রসঙ্গে ইসি কোনো মন্তব্য করবে না বলে জানান। গতকাল নির্বাচন কমিশন সভা শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচনের সিক্যুয়েন্স কোনটা আগে হবে, কোনটা পরে হবে এটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই। সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে কোন নির্বাচন আগে হবে বা পরে হবে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে।
কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে এনসিপির তোলা প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক বক্তব্যের ওপর মন্তব্য করতে চাই না। আমরা কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে এবং করে যাবে।