মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

রাবিতে আবাসিক হলসহ ১২ স্থাপনার নতুন নাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমালোচনা 

আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলসহ ১২টি স্থাপনার নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৯তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ইফতিখারুল আলম মাসউদ।

এদিকে নতুন নামকরণের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।  

রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসউদ জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি স্থাপনার মধ্যে কিছু স্থাপনার পুনঃনামকরণ, পরিবর্তন ও নতুন নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল এবং শহীদ কামারুজ্জামান হলের নাম পরিবর্তন করা হবে। কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এখন পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না।

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘জুলাই-৩৬ হল’, সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের পরিবর্তে ‘প্রশাসন ভবণ-১’, মনসুর আলী প্রশাসন ভবনের পরিবর্তে  'প্রশাসন ভবন-২', শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের পরিবর্তে 'সিনেট ভবন' নামকরণ করা হয়েছে।  

এ ছাড়া শেখ কামাল স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম', ড. কুদরত-ই-খুদা একাডেমিক ভবনের পরিবর্তে  'জাবির ইবনে হাইয়ান ভবন', ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের পরিবর্তে 'জামাল নজরুল ভবন', কৃষি অনুষদ ভবনের পরিবর্তে 'কৃষি ভবন', শেখ রাসেল মডেল স্কুলের পরিবর্তে  'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মডেল স্কুল', কাজলা গেটের পরিবর্তে 'শহীদ সাকিব আঞ্জুম গেট' এবং বিনোদপুর গেটের পরিবর্তে 'শহীদ আলী রায়হান গেট' রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হল ও একটি স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সব নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াললিখন মুছে দিতে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।  

ওই সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের পরিবর্তে ‘শহীদ আলী রায়হান হল’, শেখ হাসিনা হলের পরিবর্তে ‘ফাতিমা আল-ফাহরিয়া হল’ ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘নবাব ফয়জুন নেসা চৌধুরানী’ নাম দিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন। এ ছাড়া শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ‘রিয়া গোপ মডেল স্কুল’ নাম দেন তারা।

ফেসবুকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমালোচনা  

নতুন নামকরণের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা করছেন শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা। 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ' নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে সাফায়েত মোস্তাকিম অনিক নামের একজন কমেন্টে লেখেন, 'ড. কুদরত-ই-খুদা এই দেশের একজন পথিকৃৎ বিজ্ঞানী ছিলেন। ইবনে হাইয়ান হিস্টোরিক্যাল ফিগার কিন্তু এইক্ষেত্রে নাম পরিবর্তনটা একদমই বেখাপ্পা লাগছে। ড. ওয়াজেদও সর্বজন সম্মানিত ছিলেন। আর গেটগুলার নাম মানুষ ঐ বিনোদপুর, কাজলা গেটই বলবে, অযথা কন্ট্রোভার্সি ক্রিয়েট করা।'

মো. ইয়াকুব সরকার নামের একজন লেখেন, 'সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ড. এম মনসুর আলী এই নামগুলো কাগজে কলমেই মুছতে পারবেন, ইতিহাসের পাতা থেকে নয়!'

নাজমুল হোসাইন নামের একজন লেখেন, 'কয়েকটা নামের পরিবর্তন ছাড়া বাকিগুলো স্পষ্টই মুক্তিযুদ্ধ বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ। বোঝায় যাচ্ছে এসব নাম কাদের প্রস্তাবিত।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা তার ফেসবুকের ব্যক্তিগত টাইমলাইনে লেখেন, প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। তিনি নিজের নীতি ও আদর্শে অবিচল থাকায়, শেখ মুজিবের মন্ত্রীসভা থেকেও এক পর্যায়ে বাদ পড়েন। মুজিবের বাকশালের সঙ্গেও তার কোনো ধরনের সম্পর্ক ছিলো না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে জবাব দিতে হবে তাজউদ্দীনকে কেন "বাদ" দেওয়া হলো? তাজউদ্দীনকে বাদ দিয়ে আপনারা প্রমাণ করলেন, খোদ একাত্তরকে আপনারা বাদ দিতে চাচ্ছেন। মুহাম্মাদ কুদরাত-এ-খুদা কেন "বাদ" পড়লেন? তিনি কি ফ্যাসিস্ট ছিলেন? এম এ ওয়াজেদ মিয়ার অপরাধ কি এই যে তিনি শেখ হাসিনার স্বামী ছিলেন। তিনি স্ত্রীর নামে নয়, নিজের কৃতিত্বেই পরিচিত ছিলেন। আর সেই পরিচয়টা কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নয়।' 

তিনি আরও লেখেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে শুধু বলি, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে খুব-একটা সাফল্য অর্জন করা যায় না।'

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী তার ফেসবুকে সমালোচনা করে লেখেন, 'আইন লঙ্ঘন করে সিনেটকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীপন্থী সিন্ডিকেট সদস্যদের অপসারণের দাবি জানিয়ে ফলাফল আসেনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি সালেহ্ হাসান নকীব স্যার চালাক ছাগলের পিঠে চড়ে বসছে। শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা না করেই এসব পুনঃনামকরণ। স্যার আরো কিছু নাম দিলে ষোলোকলা পূর্ণ হয়ে যেত।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত