সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

জ্বালানিতে বরাদ্দ বাড়লেও কমেছে বিদ্যুতে

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ০৫:০৬ এএম

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে (২০২৫-২৬) গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জ্বালানি খাতকে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বাজেটগুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ বেশি থাকত। অপেক্ষাকৃত কম বরাদ্দ থাকত জ্বালানি খাতে। ফলে দেশে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হলেও জ্বালানির অভাবে এখনো অলস পড়ে আছে অনেক কেন্দ্র। যে কারণে এবার জ্বালানি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, আপাতত বিদ্যুতের মূল্য না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। একইসঙ্গে চলতি বছরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে নীতিগতভাবে আমরা বিদ্যুতের মূল্য আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুৎ খাতে প্রদত্ত ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সার্বিক ব্যয় ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলোও পর্যালোচনা করছি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমাতে এনার্জি অডিট করার উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি বলেন, এ বছরের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার এবং ২০২৮ সালের মধ্যে স্থানীয় কূপ থেকে অতিরিক্ত ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

বাজেট বরাদ্দ কমেছে বিদ্যুৎ খাতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ২০ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুতের উন্নয়নে বরাদ্দ প্রস্তাব ছিল ২৯ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। যা সংশোধিত বাজেটে কমে ২১ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা করা হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব ছিল। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুতে বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ৮২৫  কোটি টাকা। আর সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে এনে ২৭ হাজার ১৭৫  কোটি টাকা করা হয়।

বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন বাজেট ধরা হয়েছে ২০ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। আর পরিচালন ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় কমলেও পরিচালন ব্যয় আগের বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।

বাজেটে জ্বালানি খাতের বরাদ্দ দ্বিগুণ : ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ খাতে ২ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে (২০২৪-২৫) জ্বালানি খাতে ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যা সংশোধিত বাজেটে কমে হয়েছে ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৯৯৪ কোটি টাকা যা সংশোধিত বাজেটে আকার হয়েছিল ১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। জ্বালানি ও খনিজ বিভাগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয় বরাদ্দ।

উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় বলেন, সরকার নিজস্ব উদ্যোগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৭-২৮ অর্থবছরের মধ্যে বাপেক্স কর্তৃক জরিপকাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। মধ্যমেয়াদে বাপেক্সের রিগ দিয়ে ৬৯টি কূপ খনন ও ৩১টি কূপের ওয়াকওভারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার দিতে। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ বিষয়টিকে আমলে নেয়নি। ফলে প্রাথমিক জ্বালানির সংকটের কারণে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বসে থাকছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে জ্বালানি খাতকেই অগ্রাধিকার  দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত