বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

সিঙ্গাপুর কাঁটা, যাদের বিপক্ষে লিড নিয়েও জেতা হয় না বাংলাদেশের

 

 

আপডেট : ১০ জুন ২০২৫, ০১:১৮ পিএম

ফুটবলের ইতিহাস আর ঐতিহ্যে সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের চেয়ে বেশ এগিয়ে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে যখন ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের অভিষেক হয়, তারও ২৫ বছর আগে থেকে বিশ্ব ফুটবলে বিচরণ সিঙ্গাপুরের। কিন্তু এই দুই দলের দ্বৈরথের গল্পটা শুরু থেকেই এক আক্ষেপের প্রতিচ্ছবি। বারবার এগিয়ে গিয়েও জয় হাতছাড়া করার এক অদ্ভুত ধাঁধায় আটকে আছে বাংলাদেশ, যার শুরুটা হয়েছিল সেই প্রথম সাক্ষাতেই।

প্রথম দেখা ও না পাওয়ার শুরু

১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপ। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নিজেদের অভিষেক আসরেই বাংলাদেশ প্রথমবার মুখোমুখি হয় সিঙ্গাপুরের। সেদিন কিংবদন্তি কাজী মো. সালাউদ্দিনের গোলে বাংলাদেশ লিড নিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই লিড ধরে রাখা যায়নি। ম্যাচটি ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয়। 

 অফিসিয়াল রেকর্ডের বাইরের জয়

তবে আনুষ্ঠানিক ম্যাচের বাইরে একটি জয়ের ইতিহাস আছে বাংলাদেশের। ১৯৭৩ সালে মারদেকা কাপ খেলে দেশে ফেরার পথে সিঙ্গাপুরে দুটি ম্যাচ খেলেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। দেশটির জাতীয় দলের বিপক্ষে নওশেরুজ্জামানের একমাত্র গোলে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে জিতেছিল। এটিই ছিল বিদেশে বাংলাদেশের প্রথম কোনো জয়। যদিও ম্যাচটি টায়ার-১ আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বীকৃতি পায়নি। ওই সফরে সিঙ্গাপুর যুব দলের কাছে অবশ্য ২-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।

এরপর ১৯৮৬ সালে কাঠমান্ডুতে এবং ২০০৭ সালে মারদেকা কাপে (বাংলাদেশ 'বি' দল) মুখোমুখি হলেও জয়ের দেখা মেলেনি। বিশেষ করে ১৯৮৬ সালের ম্যাচটিও ছিল প্রথম ম্যাচের প্রতিচ্ছবি; প্রথমার্ধে মনির হোসেন মানুর গোলে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে।

 ঢাকার মাঠে হৃদয় ভাঙার রাত

এই এগিয়ে গিয়েও জিততে না পারার আক্ষেপ সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দেয় ২০১৫ সালে, ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে, যেখানে আজকের ম্যাচ হবে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আয়োজিত ফিফা প্রীতি ম্যাচ। প্রায় চার হাজার দর্শক সেদিন এসেছিল দলের জয় দেখার আশায়।

ম্যাচের শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো। মাত্র ৪ মিনিটের মাথায় মামুনুল ইসলামের চমৎকার এক ফ্রি-কিক থেকে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে জড়ান ডিফেন্ডার নাসির উদ্দিন চৌধুরী। গর্জে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম। মনে হচ্ছিল, এবার ইতিহাস বদলাবে। কিন্তু গোল পাওয়ার পরেই ঘটে ছন্দপতন। ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলা শুরু করা বাংলাদেশ হঠাৎ রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে, প্রায় আটজন খেলোয়াড় রক্ষণভাগে নেমে আসে।

এই সুযোগটাই কাজে লাগায় সিঙ্গাপুর। বারবার আক্রমণে বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে ব্যস্ত রাখে তারা। ৩১ মিনিটে তাদের প্রচেষ্টা সফল হয়। হাফিজ বিন আবু সুজাদের ক্রস থেকে নাওয়াজের হেড পোস্টে লেগে ফিরে এলে ফিরতি বলে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান তিনিই।

এরপরও বাংলাদেশ চেষ্টা করেছে, কিন্তু ৭২ মিনিটে সব আশা শেষ হয়ে যায়। শফিক বিন ইয়াকুবের একটি কর্নার গোলরক্ষক হিমেল ক্লিয়ার করলে বল চলে যায় বক্সের বাইরে থাকা কামালের কাছে। তার দূরপাল্লার জোরালো শট বাংলাদেশের জাল কাঁপিয়ে দেয়। স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো গ্যালারি। ঘরের মাঠে, এগিয়ে গিয়েও ২-১ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে।




সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত